ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হোক

বিশ্বকে অনেকটা চমকে দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একবার পরাজিত হওয়ার পর একই ব্যক্তির দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। তদুপরি তাঁকে ফৌজদারি মামলা ও একাধিকবার হত্যাচেষ্টা মোকাবিলা করে বিজয়ের শিরোপা নিতে হয়েছে। 

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস। দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিতর্ক ছিল উপভোগ্য, কখনো মনে হতো কমলা হ্যারিসের কাছে ট্রাম্প ধরাশায়ী হয়েছেন, কখনো মনে হতো ডোনাল্ড ট্রাম্পই তির্যক মন্তব্যে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করেছেন। 

কমলা হ্যারিস বিশ্বশান্তি, স্বাস্থ্যসেবা বাড়িয়ে ও করের বোঝা কমিয়ে আমেরিকার জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি ভূরাজনীতিতে মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন ও ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতির পক্ষে জোর প্রচার চালিয়েছেন। মার্কিন জনগণ শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এই নির্বাচনে তিনি বিশাল ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে যেমন হারিয়েছেন, তেমনি সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদেও রিপাবলিকান পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। 

বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গে আমরাও জনগণের ভোটে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও শান্তিপ্রিয় জনগণ শান্তি, সম্প্রীতি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির সাধনায় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনার অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার অপেক্ষায়। আপনার মহান জাতির নেতৃত্বের এই গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা শুরু করার সময় আপনার সাফল্যের জন্য আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।’ 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বরাবর শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, তাদেরও উদ্দেশ্য রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বৃহত্তম তৈরি পোশাক আমদানিকারক দেশ, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী দেশের তালিকারও শীর্ষে তার অবস্থান। দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যাও বর্ধমান; যাঁরা প্রবাসী আয়েও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। 

নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় কথিত অনুপ্রবেশ বন্ধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাতে অন্যান্য উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে আশার কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে চাইলেই প্রেসিডেন্ট যা কিছু করতে পারেন না। তাঁকে কংগ্রেস ও আদালতের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে অভিবাসী নেওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েও তিনি তা কার্যকর করতে পারেননি। 

যেকোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণীত হয় সেই রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের নিরিখে। সেখানে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কিংবা ক্ষমতার পালাবদলে তেমন ভূমিকা রাখে না। যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চাইবে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থেই। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে একটি মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম গুজব ছড়িয়ে চলেছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সংহত করার স্বার্থেই এ ধরনের অপপ্রচার ও গুজবের বিরুদ্ধে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। 

নির্বাচনী প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এক্স বার্তায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। আমাদের এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষ সমতা ও ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে। সে ক্ষেত্রে কেউ অপপ্রচার চালিয়ে বা গুজব ছড়িয়ে সুবিধা করতে পারবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলেও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গভীর ছিল, যার কথা প্রধান উপদেষ্টাও উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে সেই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে আশা করা যায়।