সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেত্রীসহ পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘটনা অপরাধের সমুচিত শাস্তি হিসেবেই চিহ্নিত হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নেয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচজনকে এক বছরের জন্য একাডেমিক, আবাসিক বা অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

ওই ব্যবস্থা যথাযথ প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৭ সালের কোড অব কন্ডাক্টস অব দ্য স্টুডেন্টস (শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবিধি) অনুসরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাঁচ শিক্ষার্থীর শাস্তি নিশ্চিতের নির্দেশ দেন। গত ২৬ জুলাই বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট পাঁচজনকে আজীবন বহিষ্কার করে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবাসিক হলের গণরুমে আটকে রেখে ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতন করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পর সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন রিট করেন।

ফুলপরীর ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে যাঁরা লেখাপড়া করতে আসেন, তাঁদের কাছ থেকে দেশবাসী মানবিক ও সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করে। ফুলপরী ছাত্রলীগ নেত্রীর অনুমতি না নিয়ে হলে ওঠায় তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন সংগঠনের কর্মীরা। এরপর তাঁরা গণরুমে আটকে রেখে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।

কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই কাজ করতে পারেন, ভাবতেও বিস্ময় লাগে। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করতে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। সেখানে এখন অনুমতি না নেওয়ার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু এই নেতা-কর্মীরা যে সংগঠনের ছায়াতলে এই অপরাধ করেছেন, সেই সংগঠনের কি কোনো দায় নেই? ফুলপরীর ঘটনার পরও দুটি ছাত্র হলে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে যে ২০ শিক্ষার্থীর মৃত্যুদণ্ড ও ৫ শিক্ষার্থীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়, তঁারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের দায় কী করে এড়াবে ছাত্রসংগঠনটি?

ছাত্ররাজনীতির নামে এসব সন্ত্রাসী তৎপরতা চলতে দেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের। সেই দায়িত্ব তঁাদেরকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে।

ফুলপরীর ঘটনার পর তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফুলপরীর নিরাপত্তায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু যে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শাস্তি পেয়েছেন, সেই সংগঠন যদি শাস্তির বিষয়টি ভালোভাবে না নেয়, তাহলে ফুলপরীর নিরাপত্তা নিয়ে সত্যিই ভাবার বিষয় আছে।

নিরাপত্তার কারণে তিনি অপর একটি হলে আসন বরাদ্দ নিয়েছেন। আমাদের দাবি থাকবে, ক্যাম্পাসে তো বটেই, ক্যাম্পাসের বাইরেও ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।