সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না

বাসের আসন নিয়ে চালক ও কর্মীর সঙ্গে একজন শিক্ষার্থীর বচসাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও উদ্বেগজনক, তেমনি নিন্দনীয়। হামলায় দুই শর মতো শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন; যাঁদের তিনজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়েছে। একদিকে পুলিশ বক্স ও শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকানপাট। তাহলে আইনের শাসন কোথায়?

একজন যাত্রীর সঙ্গে আসন নিয়ে বাসের চালক-কর্মীর বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু সেই বিতর্কের ঘটনা কেন সহিংসতায় রূপ নেবে? কেন এলাকায় ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ তৈরি হবে?

কোনো আইনানুগ নাগরিকই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। তঁার প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে মনে করলে ওই শিক্ষার্থী আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। আবার স্থানীয় বাসিন্দারাও আক্রান্ত হলে থানা-পুলিশের সহায়তা চাইতে পারতেন।

সেসব না করে উভয় পক্ষ একে অপরের ওপর শক্তি দেখিয়েছে। দুই পক্ষের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে যে বাড়াবাড়ি করেছে, তা–ও পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। আর পুরো ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীরবতা রহস্যজনক। তাঁরা যখন দৃশ্যপটে এসেছেন, তখন সবকিছু ধ্বংসযজ্ঞ শেষ হয়ে গেছে, আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনে রাখা প্রয়োজন, জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব তাদের। তারা এমন কিছু করতে পারে না, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। রাজশাহীর ঘটনায় তারা সেই কাণ্ডই করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুলিশ কীভাবে ক্যাম্পাসে ঢুকল? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে না নেওয়ার কারণেই তিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নাজুক থেকে নাজুকতর হচ্ছে। সাময়িক হলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ। এ ক্ষতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এড়াবে কীভাবে?

বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের এ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েও যে কথা বলা প্রয়োজন তা হলো, তঁাদের কর্মসূচি হতে হবে শান্তিপূর্ণ। আন্দোলনের নামে জানমালের ক্ষতি হয় কিংবা জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, এমন কিছু করা সমীচীন নয়। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন, এটাও আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নিতে পারি।

কিন্তু তঁারা রেললাইন ও সড়ক অবরোধ করতে গেলেন কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আশা করি, তারা সত্য খুঁজে বের করতে এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত, যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু করা। এক দিনের জন্যও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমস্যা হলে শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। ছাত্র সংসদই শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলত। কিন্তু তিন দশক ধরে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ আছে (একবার ডাকসু নির্বাচন দিয়ে কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার আর ওমুখো হয়নি)।

নির্বাচিত ছাত্র সংসদের স্থলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটিই এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দৌরাত্ম্য দেখাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এ জবরদস্তির অবসান হওয়া উচিত।