সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ডিএসএর মামলা খারিজ

অন্য মামলায়ও এই নজির অনুসৃত হোক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজ হওয়ার ঘটনাটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কথিত মানহানি কিংবা অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে হয়রানি করার অস্ত্র হিসেবে শুরু থেকে আইনটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের পক্ষে এনামুল হকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এনা গ্রুপের কর্মকর্তা পারভেজ হোসেন বাদী হয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। সোমবার ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত মামলা খারিজ করে দিয়ে বলেন, মামলাটি আমলে নেওয়ার মতো আইনি ভিত্তি নেই।

আদেশে বলা হয়, ‘ভুক্তভোগী’ এ মামলায় অভিযোগকারী হিসেবে দাঁড়াননি বা তার কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয়ও ছিলেন না। যে ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেন, তিনি মিজানুর রহমান মিনুর এ মন্তব্যে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত পাননি। তাই মামলাটি বাতিল করা হলো।

পারভেজ হোসেন দাবি করেছিলেন, ১৯ জুলাই রাত একটায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান এনামুল হককে ‘ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি’ বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি বলেছেন, এনামুল হক কখনো ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী ছিলেন না, এখন তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

এনামুল হক যদি ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির করে না থাকেন এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী থেকে থাকেন, তাহলে তাঁর উচিত এর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ জনগণের সামনে হাজির করা। মিজানুর রহমানের অভিযোগ খণ্ডনের সেটাই উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতো। কিন্তু তিনি সে পথে না গিয়ে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন।

এর আগেও আমরা দেখেছি, ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থাকা ব্যক্তিরা কোনো অজুহাত পেলেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। আর এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই মোক্ষম অস্ত্র। আইনের মূল কথা হলো, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে হবে।

কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে বিচারের আগেই অভিযুক্তকে ‘শাস্তি’ ভোগ করতে হয়। অনেকে মাসের পর মাস কারাগারে থাকেন। যদিও এই আইনে দায়ের করা মামলার ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা।

ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এখতিয়ারবহির্ভূত বলে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। আইনবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটি অনুসৃত হওয়া উচিত। কোনো ব্যক্তির মানহানি হলে কিংবা অনুভূতিতে আঘাত পেয়েছেন মনে করলে তিনিই মামলা করবেন। একজনের পক্ষে আরেকজন কেন করবেন?

২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি (ডিএসএ) পাসের সময়ই সংবাদমাধ্যমের অংশীজনসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এর বিরোধিতা করেছিলেন। সরকার যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যে ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য এই আইন করা হয়েছে।

বাস্তবে ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে, মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ রুদ্ধ করেছে। সর্বোপরি আইনটি সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেও এই আইনের অপব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি আইনটি সংশোধন করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু আমরা মনে করি, ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এই আইনের প্রয়োজন নেই। আইনটি প্রত্যাহার করা হোক।