সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সাবেক এমপির বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে না

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি ডুবিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করে মাছ চাষ করার খবর ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়। এরপর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে এবং সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনে তৈরি অবৈধ বাঁধ কেটে দেয়। তাদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। সরকারি কোনো সংস্থা বা বিভাগ সংবাদমাধ্যমের খবর দেখে এত ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার নজির কম।

৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় সম্পাদকীয় লিখে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানানো হয়েছিল। ‘বন ডুবিয়ে প্রভাবশালীদের হ্রদ’ নির্মাণের পেছনে ছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-১৫) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। তিনি দাবি করেছেন, বন দখল ও বাঁধ কাটার সঙ্গে তিনি বা তাঁর সহযোগী কেউ দায়ী নন।

অন্যদিকে বন বিভাগ বলছে, বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সাবেক সংসদ সদস্য বাধা দেন। তিনি একবার বন বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ডেকে এনে, একবার টেলিফোনে তাঁর অভিপ্রায়ের কথা জানান।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। হ্রদটি তৈরি করা হয়েছে বনের সোনাকানিয়া নামের একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে। বাঁধের দৈর্ঘ্য ২০০ ফুটের মতো। প্রস্থ ২০ ফুট ও উচ্চতা ১০০ ফুট। বাঁধের কারণে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার ৪ হাজার ২২৫ একর জমির চাষাবাদ যে ব্যাহত হলো, বনের কয়েক লাখ গাছ ধ্বংস করা হলো, জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হলো, এর ক্ষতিপূরণ সাবেক সংসদ সদস্য ও তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।

বন বিভাগ বাঁধটি কেটে দিতে পেরেছে তখনই, যখন নদভী সাহেব আর সংসদ সদস্য নেই। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। পত্রিকার খবর থেকে জানা গেল, বন বিভাগ সাবেক সংসদ সদস্যের পিএসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে। একটি মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য নদভীর একান্ত সচিব এরফানুল করিমকে প্রধান আসামি করা হয়।

ওই মামলায় আরও চারজন আসামি আছেন। আরেকটি মামলায় বাঁধ নির্মাণ থেকে হ্রদ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত এরফানের দুই ঘনিষ্ঠজন মো. নাছির উদ্দিন, মনজুর আলমসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। এরফানুল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য (লোহাগাড়া) ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

কিন্তু সাবেক সংসদ সদস্যের নামে কেন মামলা হবে না? তাঁর ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়েই তো প্রভাবশালীরা বনে বাঁধ দিয়ে বাণিজ্য করে আসছিলেন। সরকার অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে। এখানে তো সাবেক সংসদ সদস্য আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে না?

বন বিভাগ জানায়, হ্রদ তৈরির কারণে গামারি, সেগুন, চিকরাশি, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় পাঁচ লাখ গাছ মারা গেছে। ডুবে যাওয়া জায়গার মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের পথ ছিল। নানা প্রজাতির প্রাণী বাস করত সেখানে। বাঁধটি কেটে দেওয়ার পর পানি নেমে গেলে বন ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। এখন নতুন করে ওই বনাঞ্চলের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সে কাজটি বন বিভাগকেই করতে হবে। আশাব্যঞ্জক খবর হচ্ছে, বাঁধ কেটে দেওয়ার কিছুদিন পর সেখানে আবার বন্য হাতির দল দেখা গেছে। নতুন করে বনভূমিটি পুনরুদ্ধার করতে পারলে হাতিসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের জন্যও নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র ও আবাসভূমি হয়ে উঠবে এলাকাটি।