সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবনধস

ঠিকাদারি সংস্থাকে রক্ষার দায়িত্ব কি প্রশাসনের

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ছাদঢালাইয়ের কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন হলের একটি অংশ ধসে পড়ার পর যেসব ঘটনা সেখানে ঘটছে, সেটা কোনোভাবেই নৈতিকতার মানদণ্ডে শোভন বলা যায় না; বরং সেটি স্বেচ্ছাচারিতার নজির। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ১০ তলা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের একটি অংশ ধসে পড়ার ঘটনায় তদন্ত শুরুর আগেই ভবনে কাজ করা হচ্ছে।

ভবনধসের কারণ উদ্‌ঘাটনের আগে ভবনটিতে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁদের এ আশঙ্কা যথার্থ। যেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং ভবন নির্মাণের যে প্রকৌশলগত নিয়মবিধি, তা লঙ্ঘন করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। ভবনধসে ৯ শ্রমিক আহত হওয়ার পরও কাজের অনুমতি দেওয়ার মানে হচ্ছে শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী—কারও জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ভবনটি যেদিন বিমের কাজ করা হয়, তার পরদিনই ছাদ ঢালাই করা হয়। সাধারণত বিম করার পর ১০ থেকে ১৫ দিন সেখানে সময় দিতে হয়। এ সময়ের মধ্যে তা শুকিয়ে শক্ত হওয়ার পর কাজ করতে হয়। বিমে নিয়মিত পানি দিতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ধসে যাওয়া ভবনে এসব কিছুই মানা হয়নি।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক বলেছেন, পুরো ভবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কাজ শুরু করলে যেকোনো সময় আবার বিপদ হতে পারে। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা থেকে মনে হতে পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষায় কি তাঁরা কোমর বেঁধে নেমেছেন। যেদিন ভবনধস হয়, সেদিন রাতেই তদন্ত কমিটি হলেও তদন্ত কমিটির কাছে চিঠি পৌঁছাতে চার দিন চলে যায়।

এর মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আলামত নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তো তদন্ত শুরুর আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে ভবনে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন।

যদিও উপাচার্য বলছেন, কাঠের অংশের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সিভিল অংশের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। কিন্তু পুরো ভবনটির নির্মাণকাজ নিয়ে যেখানে প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে কাঠের অংশের কাজটিই যে নিরাপদে করা হবে, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? সবচেয়ে বড় কথা, মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন নামের যে প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের কাজ করছে, তারা আলোচিত রূপপুরের ‘বালিশ-কাণ্ডে’ জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য নির্মাণকাজে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে। এ রকম একটা প্রতিষ্ঠানের হাতে ভবন নির্মাণের কাজ দিয়ে কীভাবে নিশ্চিন্ত থাকছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন?