একতাই বল—প্রবাদবাক্যটির সঙ্গে কে না পরিচিত। এর সঙ্গে একটি গল্পও কমবেশি আমাদের সবারই জানা। যেখানে এক কৃষক শেষ বয়সে তার সন্তানদের একটি লাকড়ি এবং একসঙ্গে অনেকগুলো লাকড়ি ভাঙতে দেওয়ার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করতে শেখায় যে তার মৃত্যুর পর ভাইয়ে ভাইয়ে কোনো বিবাদে না জড়িয়ে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং এতেই সুখ-শান্তি মিলবে।
এমন ঐক্যবদ্ধ থাকার মধ্য দিয়ে দারুণ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের ছয় ভাই। তাঁরা শুধু পরিবারের ভেতরে একতা সৃষ্টি করেননি, সেটি ছড়িয়ে দিয়েছেন সমাজের মধ্যেও।
ছয় ভাই মিলে গ্রামের মানুষকে নানাভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন। অতি দরিদ্র পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। ছয় ভাইয়ের এমন কর্মকাণ্ড স্থানীয়ভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মনোহরপুর গ্রামের রফিউদ্দিন বিশ্বাসের সন্তান এই ছয় ভাই। তাঁদের মধ্যে বড়জন হচ্ছেন মিজানুর রহমান বিশ্বাস, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক।
দ্বিতীয় ভাই আজাদুর রহমান বিশ্বাস একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তৃতীয় ভাই সাহানুর রহমান বিশ্বাস গ্রামে নিজেদের জমিজমা তদারক করেন। চতুর্থ ভাই হাসানুর রহমান বিশ্বাস একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা। পঞ্চম ভাই সাইদুর রহমান বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী। আর সবার ছোট মাহবুবুর রহমান বিশ্বাস একটি মুঠোফোন কোম্পানির কর্মকর্তা।
গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে কয়েকজনকে গরু-ছাগল কিনে দেওয়ার জন্য অর্থ দিয়েছিলেন ছয় ভাই। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা সুখকর না হওয়ায় অতিদরিদ্র পরিবারকে পাকা ঘর করে দিচ্ছেন এখন। তাঁদের লক্ষ্য, প্রতিবছর অন্তত দুটি পরিবারকে ঘর করে দেবেন তাঁরা। ইতিমধ্যে গত পাঁচ বছরে ১০টি পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন ছয় ভাই।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম খাঁ বলেন, ‘কী সুন্দর একটা কাজ! অন্য বিত্তবানেরাও যদি এভাবে এগিয়ে আসতেন, এলাকার চেহারাই তাহলে বদলে যেত।’ কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার তো গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছেই। পাশাপাশি সচ্ছল মানুষও যদি এভাবে এগিয়ে আসতেন, কতই-না এগিয়ে যেত দেশ।’
গ্রামের মানুষের জন্য নীরবে কাজ করে চলেছেন বিশ্বাস পরিবারের ছয় ভাই। তাঁদের স্বপ্ন, গ্রামে সব দরিদ্র পরিবারের ঘর হয়ে গেলে তখন অন্য উন্নয়নের কাজে হাত লাগাবেন। সামর্থ্যবানেরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, এটিই সমাজের নিয়ম। তবে পরিবারের সব ভাই মিলে এভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে সমাজকে বদলে দিতে উদ্যোগী হবেন, তা বিরল। আমরা কালীগঞ্জের এই ছয় ভাইকে অভিবাদন জানাই।