সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দ্রুত চালু করে আখচাষিদের বাঁচান

বাংলাদেশের অর্থনীতি কেন দিন দিন পরনির্ভরশীলতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কলকারখানার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। যেমন দেশে রাষ্ট্রীয় চিনিকল আছে, কিন্তু সেগুলো চলছে ধুঁকে ধুঁকে। কিছু কল বন্ধও হয়ে গেছে। চিনিকলের জমির দিকে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর যত মনোযোগ। অথচ চিনি আমদানি করা হচ্ছে অন্যান্য দেশ থেকে। এতে দামও বেশি পড়ছে। আর দেশের হাজার হাজার আখচাষিকে পথে বসতে হচ্ছে। এমনটি দেখা দিয়েছে রংপুরের বদরগঞ্জে।

লোকসানের অজুহাতে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে বদরগঞ্জের একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১০ হাজার একর জমিতে আখ চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ১০ সহস্রাধিক চাষি। সেই জমিতে অন্য ফসল চাষ করেও লাভবান না হয়ে ক্রমান্বয়ে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। বারবার দাবি জানানো হলেও কলটি আর চালু করা হয়নি।

সম্প্রতি চিনিকলটি চালুর জন্য শ্যামপুর বাজারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন আখচাষিরা। সেখানে তাঁরা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের সময় শিল্প মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী চেয়েছিলেন চিনিকলটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অধীনে ছেড়ে দিতে। কলটির বিশাল জমি দখলই তাঁদের প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু সরকারের পতন হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। আখচাষিদের এ অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি গুরুতর।

১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলের বার্ষিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন। ২০২০ সাল পর্যন্ত চিনিকলে স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন ৭৪৪ জন। ২২৬ কোটি টাকা লোকসানের মুখে চিনিকলটির আখমাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে আছেন ৬১ জন। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরও পাঁচ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। ফলে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

শ্যামপুর আখচাষি কল্যাণ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘চিনকলটি বন্ধ থাকায় এলাকার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমাদের এই অঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকা মানি সার্কুলার হতো। গ্রামে থেকেও আমরা শহুরে জীবন যাপন করতাম। বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে আমরা বাস করছি।’

বন্ধ থাকতে থাকতে কলটির যন্ত্রপাতি নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, চিনিকলটি দ্রুত চালু করা হবে। এতে বাজারে দেশি চিনির সরবরাহও বাড়বে।

চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন, উৎপাদন ও বাজারব্যবস্থায় নীতিগত সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা। রাষ্ট্রায়ত্ত কলগুলোর লোকসানের পেছনে এটি প্রধানতম কারণ। চিনিশিল্পে আমদানিনির্ভরতা কমানোর এখনই সময়। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।