সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বন্যা মোকাবিলায় টেকসই প্রস্তুতি প্রয়োজন

উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যাওয়ায় লাখ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় দুই জেলায় অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেটের ১২টি উপজেলাতেই পানি ঢুকেছে। কোথাও কোথাও পানি বেড়ে নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লাখ। আগামী দুই দিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা আছে।

সিলেট প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টি প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট নগরে ৮০টি ও জেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। ১৭ হাজার ২৮৫ জন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় উপজেলাগুলোর বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর আগে গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছিল।

এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বেশির ভাগ সড়কই বন্যার পানিতে প্লাবিত। পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শহরের অনেক বাড়ি, সরকারি–বেসরকারি অফিস ও দোকান ডুবে গেছে। সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল খুলে দেওয়া হচ্ছে মানুষ আশ্রয় নেওয়ার জন্য। বন্যার কারণে ছাতক-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রতিবার ঈদের ছুটিতে অনেক মানুষ সিলেটের পাহাড়, সুনামগঞ্জের হাওর ও শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানে ঘুরতে যান। এবারের বৃষ্টির কারণে পর্যটকসংখ্যা ছিল এমনিতেই কম।

প্রতিবছরই উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিলেট অঞ্চল ডুবে যায়। উজানের ঢলের ওপর আমাদের হাত নেই। কিন্তু আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা বাড়াতে পারলে সেই পানি দ্রুত নিচে নেমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি কমানো সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বৃহত্তর সিলেটের নদীগুলোও মারাত্মকভাবে দূষণ ও দখলের শিকার। খালগুলো অনেক আগেই ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত।

বন্যার কারণে যেসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন, তঁাদের খাবারদাবারের ব্যবস্থা করতে হবে ঘরবাড়িতে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত। এরপর প্রত্যেকের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। বিশেষ করে যাঁদের ঘরবাড়ি ও কৃষি, মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যঁার বীজ প্রয়োজন, তাঁকে বীজ দিতে হবে, যাঁর ঘর মেরামত করতে হবে, তঁাকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও স্বদলপ্রীতির সুযোগ নেই। আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সমন্বিতভাবে কাজটি করবেন।

সুরমা ও কুশিয়ারার দখল ও দূষণের হাত থেকে সুরমা ও কুশিয়ারাকে রক্ষা করতে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা নিতে হবে। বছর বছর নদী খননের জন্য অর্থও বরাদ্দ হলেও কাজ হয় না। জলের টাকা জলেই যায়। বৃহত্তর সিলেটের মানুষকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে হলে লোকদেখানো নদী খননের মহড়া বন্ধ করতে হবে।

বন্যার মৌসুম সবে শুরু হলো। সামনের দিনগুলোতে বন্যার প্রকোপ আরও বাড়তে পারে, সে ব্যাপারেও সরকারের আগাম ও টেকসই প্রস্তুতি থাকা জরুরি বলে মনে করি।