সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বদলে যাওয়া হাসপাতাল

অভিনন্দন চিকিৎসক মকছেদুল মোমিনকে

দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হয় মানুষ। হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা-আবর্জনাময় পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা, চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলা, অপ্রতুল চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ—এসবই হচ্ছে এর উল্লেখযোগ্য কারণ।

দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতো এমন সব সমস্যায় জর্জরিত ছিল মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এমনকি হাসপাতালের চৌহদ্দিতেই চরে বেড়াত গরু-ছাগল। আর রাতে বসত মাদকসেবীদের আড্ডা। ফলে চিকিৎসক ও নার্সরা হাসপাতালটিতে বেশি দিন থাকতে চাইতেন না।

এমন পরিস্থিতিতে কী করে কোনো রোগী হাসপাতালটিতে আসতে ইচ্ছুক হবেন? কিন্তু সেটিই সম্ভব করে তুলেছেন মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকছেদুল মোমিন। তাঁর নেতৃত্বে হাসপাতালটির পরিবেশ এমনভাবে বদলে গেছে, যাতে রীতিমতো অবাকই হতে হয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত চার বছরে হাসপাতালের ভেতর-বাইরের পরিবেশ এখন ঝকঝকে। চারপাশে বাহারি গাছপালা নিয়ে সবুজ বাগান। রোগী ও তাঁদের সঙ্গে আসা স্বজনদের সময় কাটানোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একটি পাঠাগারও।

বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা, বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরাও। হাসপাতালের আবাসিক ভবনগুলোও ঢেলে সাজানো হয়েছে। এমন পরিবেশ ও নিরাপত্তা পেয়ে চিকিৎসক-নার্সরাও হাসপাতালটি ছেড়ে যেতে চান না। স্বাভাবিক প্রসবেও সুনাম কুড়িয়েছে এ হাসপাতাল। গর্ভবতী নারীদের নিয়ে সমাবেশ, রোগীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা, মানসিক সেবার আয়োজন করা হচ্ছে নিয়মিত। ফলে রোগীরা হাসপাতালটিতে ভিড় করছেন। ফলে দূরদূরান্ত থেকেও আসছেন অনেকে। হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখতে সপ্তাহে এক দিন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে ক্লিন ডে পালন করেন।

হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখলে যে কারও ছোটখাটো একটা পার্কের মতো মনে হবে। একটি হাসপাতালকে কীভাবে জনবান্ধব করে তুলতে হয়, এ দৃষ্টান্তই গড়লেন মকছেদুল মোমিন। হাসপাতালটিতে লোকবলের সমস্যা আছে। ফলে জরুরি অনেক অস্ত্রোপচার ব্যাহত হচ্ছে। পুরোনো মডেলের এক্স-রে মেশিনটি প্রায়ই বিকল থাকে। ৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রশাসনিক অনুমোদন মিললেও সেটি এখনো কার্যকর হয়নি।

এত সীমাবদ্ধতা নিয়েও থেমে থাকেননি মোমিন, হতাশ হয়ে পিছিয়েও যাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুধী সমাজ, সরকারি কর্মকর্তা ও এলাকার সাধারণ মানুষকে নিয়ে একটি আদর্শ হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন তিনি। যেটি জেলা সদরের অনেক হাসপাতালের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। আমরা আশা করছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটির এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করবে।

সরকারি হাসপাতালে গেলে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যান, এমন ধারণাই অনেকে পোষণ করেন। এটিই যেন এ দেশের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার করুণ বাস্তবতা। আমরা মনে করি, সরকারি প্রতিটি হাসপাতালে মকছেদুল মোমিনের মতো একজন চিকিৎসক বা কর্মকর্তা থাকলে, তাঁর মতো আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ থাকলে এমন ধারণা পাল্টে যেতে বাধ্য। আমরা এই চিকিৎসককে অভিনন্দন জানাই।