বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তবে কর্মসূচির নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে দুটি দিক আছে। প্রথমটি হলো বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়া। দ্বিতীয়টি হলো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সব দল ও সংগঠনেরই সভা–সমাবেশ করার অধিকার আছে। সে ক্ষেত্রে কোনো দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া সংবিধানের স্পষ্ট বরখেলাপ।
দেখার বিষয়, কর্মসূচি বা সমাবেশের নামে কারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে? দেড় কোটি জন-অধ্যুষিত নিত্য যানজটের শহরে যেকোনো কর্মসূচি জনজীবনে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবেই। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো এমনভাবে কর্মসূচি দেওয়া, যাতে জনগণের ভোগান্তি কম হয়। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম, গত সপ্তাহে দুই কর্মদিবসে একই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশ করেছে যথাক্রমে শান্তি শোভাযাত্রা ও পদযাত্রার নামে। প্রথমে বিএনপি পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণার করার পরপরই আওয়ামী লীগও একই দিন কর্মসূচি নেয়। এ কারণে শহরে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয় এবং নগরবাসী অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে।
এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল, যেহেতু বিএনপি আগে কর্মসূচি নিয়েছে, আওয়ামী লীগকে একই দিনে কর্মসূচি নেওয়া থেকে বিরত রাখা। আওয়ামী লীগ আগে কর্মসূচি নিলে বিএনপিকেও একইভাবে বিরত রাখবে তারা। একই দিন দুই দলের কর্মসূচি জনদুর্ভোগই কেবল বাড়ায় না, সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। ১৮-১৯ জুলাই ঢাকায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। একই দিনে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের তারুণ্যের সমাবেশ ডাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। সরকার যদি সত্যি সত্যি জনদুর্ভোগ কমাতে চায়, তাদের উচিত হবে পরে যারা কর্মসূচি ডেকেছে, তাদের অনুমতি না দেওয়া। একই দিন প্রায় একই সময়ে দুই দলের কর্মসূচি নেওয়া অশান্তিরই আলামত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, যাঁরাই দুর্ভোগ সৃষ্টি করবেন, আইন অমান্য করবেন, আইন মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাস্তবে কি সেটা সব ক্ষেত্রে নেওয়া হয়? আমরা তো দেখি সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দিলে কিংবা চড়াও হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের সরকারি দলের ‘সম্পূরক শক্তি’ হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়।
দেশের শান্তিকামী প্রতিটি নাগরিকই চান, সরকার জনজীবনের শান্তি রক্ষা ও জনগণের দুর্ভোগ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। যারা আইন অমান্য করবে, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কারও প্রতি পক্ষপাত দেখানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো দলবিশেষের সহায়ক শক্তি নয়।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকবে কি না, সেটা অনেকটা নির্ভর করে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের আচরণের ওপর। সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচির নামে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করলে পরিস্থিতি যেকোনো সময় অশান্ত হয়ে উঠতে পারে; যা কারোরই কাম্য হতে পারে না। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সরকার তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ফাঁসানো কখনোই আইনের শাসন হতে পারে না।