সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কৃষকদের ক্ষতি করে, এমন স্থাপনা নয়

দেশের নদ-নদী-খালে সেতু-কালভার্টের অভাব নেই। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির জন্য এর বিকল্প নেই। কিন্তু অতীতে সম্ভাব্যতা যাচাই না করে এমন অনেক সেতু বা কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে, যাতে নদ-নদী-খালই মরতে বসেছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ, কৃষি ও জনপদ। যেমনটি আমরা দেখছি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। সেখানে পানিনিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পানিনিষ্কাশন না হয়ে উল্টো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এ কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের একটি বিলে শতাধিক বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। জমিগুলোয় বোরো ধান ও রবিশস্য আবাদ হয়। বর্ষা মৌসুমের পর এসব জমির পানি গ্রামের একটি সরকারি খাল দিয়ে বড়াল নদে চলে যেত। কিন্তু কয়েক বছর আগে খালের মুখে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। স্থাপনাটি সমতলভূমির চেয়ে উঁচু হওয়ায় পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। এর মধ্যে স্থানীয় কিছু মানুষ খালের একাংশ দখল করে রাস্তা ও দোকানঘর নির্মাণ করেন। পুরো খাল আটকে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

কৃষকদের ভাষ্য, অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণ এবং খাল দখলের কারণে কয়েক বছর ধরে বিলের পানি আর বের হতে পারছে না। তাঁদের জমিগুলো বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধ হয়ে থাকছে। তাঁরা কোনো ফসল আবাদ করতে না পেরে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সরকারি খালটি দখলমুক্ত চান ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যও বলছেন, খালটি ভরাটের কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ইতিমধ্যে পাথরঘাটা গ্রামের ৫০ জন কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ জানিয়েছেন। অবিলম্বে তাঁরা খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউএনও নাজমুন নাহার বলেন, ‘কৃষকদের আবেদনটি পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগির সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমরা ইউএনওর বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খালটি দখলমুক্ত করা হোক। খালের জায়গা দখল করে রাস্তা ও দোকানঘর বানানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া কালভার্টটির পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা কীভাবে কৃষিবান্ধব করা যায়, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হোক।