আম পরিবহনে টোল ও চাঁদা

চাষি-ব্যবসায়ীদের ওপর এই জুলুম বন্ধ করুন

আমের ভরা মৌসুম এখন। উৎপাদন ভালো। দামও নাগালের মধ্যে। এই সময়ে আমচাষি আর ভোক্তা দুই পক্ষের মুখেই থাকার কথা চওড়া হাসি। অথচ খাগড়াছড়ির আমচাষিদের মনে আনন্দ নেই। কারণ, আমের একটি চালান খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় পাঠাতে ঘাটে ঘাটে গুনতে হচ্ছে টোল আর চাঁদা। ফলে খাগড়াছড়ির মিষ্টি স্বাদের আম্রপালি আমের থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়টি আবারও সামনে এল। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, দুই টনের প্রতি গাড়িতে সাতবার টোল-চাঁদায় কমপক্ষে ৬ হাজার ৯০০ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এক আমের গাড়ি থেকে পৌরসভা ও জেলা পরিষদ তিন দফা টোল আদায় করছে। তিন আঞ্চলিক সংগঠন ও পুলিশের নামে চার দফা চাঁদা উঠছে। টোলের বিষয়টি পৌরসভা ও জেলা পরিষদ স্বীকার করছে। কিন্তু জেলা পরিষদ নিজেই আলাদাভাবে দুই দফা টোল নেয়। তারা বলছে, একটি বাজার ফান্ডের চাঁদা, অন্যটি জেলা পরিষদের। কিন্তু গাড়িপ্রতি টোল হিসেবে যে পরিমাণ টাকার কথা কাগজে-কলমে আছে, তার চেয়ে তিন গুণ পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর জন্য কি ব্যবসায়ীরা জেলা পরিষদ থেকে কোনো বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন? এভাবে বাড়তি টোল আদায় করা ব্যবসায়ীদের ওপর অবশ্যই জুলুম।

অন্যদিকে তিন আঞ্চলিক দল ও পুলিশ যথারীতি চাঁদা তোলার কথা অস্বীকার করেছে। শাকসবজি, ফলমূলের ট্রাকে চাঁদাবাজির খবর কোনো গোপন খবর না। কিন্তু চাঁদা নেওয়ার কথা কস্মিনকালেও কোনো চাঁদাবাজ স্বীকার করেন না। তবে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল জাতীয় সংসদে একবার কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক নিজেই সবজির ট্রাকে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে বলে স্বীকার করেছিলেন। এর তিন বছর পর ২০২২ সালে সবজির ট্রাকে চাঁদাবাজি নিয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। ওই প্রতিবেদনে কোন পয়েন্টে কত টাকা চাঁদা তোলা হয়, এর প্রভাব শাকসবজি, ফলমূলে কতটা পড়ছে, তারও উল্লেখ ছিল। প্রতিবেদন যখন জমা পড়েছে, ধরে নেওয়া যায় চাঁদাবাজেরাও শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়েছে? সেই খবর আমরা আর জানতে পারিনি।

টোল ও চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়ীরা ছাড়াও ক্ষতির মুখে পড়ছেন আমচাষি, উদ্যোক্তা, শ্রমিকেরা। আবার টোল ও চাঁদা দিয়ে যে আম আনা হচ্ছে, তা-ও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। জেলা প্রশাসকের বক্তব্য, চাঁদাবাজির বিষয়টি কেউ অভিযোগ করলে তখন ব্যবস্থা নেবেন। তাহলে প্রশ্ন, কেউ অভিযোগ না করলে কি এই চাঁদাবাজি চলতে থাকবে? তিনি এ-ও বলেছেন, জেলা পরিষদ ও পৌরসভার টোলের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন এবং আমচাষি, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের স্বস্তি দেবেন।