আজ শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ২ হাজার ২৪ বছর আগে জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গোয়ালঘরে আজকের দিনে জন্ম নিয়েছিলেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশু। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর খ্রিষ্টান সম্প্রদায় দিনটি উদ্যাপন করবেন মহা উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। তাঁরা স্মরণ করবেন যিশুর শান্তির বাণী। মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে জন্মেছিলেন যিশু। হিংসা, বিদ্বেষ ও পঙ্কিলতার পথ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন ভালোবাসা, করুণা, মিলন ও সুন্দরের পথ।
মহান যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী প্রচার করে গেছেন, তা সর্বকালে জাতি–ধর্মনির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আশাহীন মানুষকে দিয়েছেন আশা; জীবনসংগ্রামে পর্যুদস্ত মানুষকে জুগিয়েছেন জীবনজয়ের অনুপ্রেরণা। যুদ্ধ ও অশান্তির বিপরীতে তিনি মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন মমতা, ভালোবাসা ও মিলনের পথে। এর জন্য যিশুকে অবর্ণনীয় নিগ্রহেরও শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু এসব নিগ্রহ–নিপীড়ন তাঁকে সত্য ও কল্যাণের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। যিশু পাল্টা আঘাতের কথা বলেননি; তিনি অনায়াসে ক্ষমা করেছেন আর সমগ্র মানবজাতির হয়ে সব দুঃখ-যন্ত্রণা আত্মস্থ করতে চেয়েছেন। তাই অমানবিকতাকে জয় করে প্রকৃত মানব হয়ে ওঠার জন্য যিশুর শিক্ষা হতে পারে জীবনের পাথেয়।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোয় বাজার চাঙা হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে ঘরে ঘরে উৎসবের নানা আয়োজন চলছে। লম্বা ছুটি নিয়ে প্রিয়জন বা পরিবার নিয়ে অনেক মানুষ ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন পর মিলিত হচ্ছেন আপনজনের সঙ্গে। সাম্প্রতিক সংঘাতময় বিশ্বে যিশুর বাণী আরও বেশি তৎপর্যময়। এ বছর যখন সারা বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বড়দিন উদ্যাপন করতে যাচ্ছেন, তখন দেশে দেশে যুদ্ধ–সংঘাত লেগেই আছে। বিশেষ করে যিশুর জন্মভূমি ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা চলছে। সিরিয়া সংকটে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। এ যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অনেক দেশকে শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
চলতি বছর বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। জনগণের মধ্যে যে আশা জেগেছে, সেটি ধরে রাখতে যিশুর শান্তি ও অহিংস বাণী অনুপ্রেরণা জোগাবে নিঃসন্দেহে।
বড়দিনে যিশুর কোটি কোটি ভক্ত তাঁর বন্দনা গাইবেন। যাবতীয় অশান্তি, বিদ্বেষ, হানাহানি ও সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনায় নত হবেন মানুষ। যিশু তো এসেছিলেন পরিত্রাণের দূত হয়েই। বড়দিন বা যিশুখ্রিষ্টের পবিত্র জন্মতিথিতে আমরা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানাই। পৃথিবী থেকে দূর হোক হিংসা ও অশান্তি।