সুরমা—সিলেটের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে উচ্চারিত নদীর নাম। এ আন্তসীমান্ত নদী সুনামগঞ্জ ও সিলেট দুই জেলা দিয়ে প্রবাহিত। দেশের নদীদূষণ ও দখল কী ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে গেছে, তা প্রকাশ পায় ২০২২ সালের এ দুই জেলার ভয়াবহ বন্যায়। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহর ডুবে যাওয়ার একটি বড় কারণ হিসেবে আলোচিত হয় সুরমা নদীর দখল, দূষণ ও নাব্যতা-সংকট। এখন সুরমা নদীর কী হাল? দেখা যাচ্ছে, ময়লা-আবর্জনায় দিন দিন আরও বেশি বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে নদীটি। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সিলেট নগরে সুরমা নদীর পাড়ে অন্তত ৯টি স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে। তীরের বাসিন্দারাই এসব ময়লা ফেলছেন, সেটি তাঁরা স্বীকারও করেছেন। সেই বাসিন্দারাই আবার দুর্ভোগে পড়ছেন। আবর্জনা ফেলায় এসব স্থানে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাড় থেকে সেই ময়লা নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে, মশা-মাছি উড়ছে। ফলে সুরমা নদীপারে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
নগরে নদীতীরের মাছিমপুর, কালীঘাট, ঝালোপাড়া, চাঁদনীঘাট, কাজীরবাজার ও শেখঘাট অংশে সবচেয়ে বেশি ময়লা-আবর্জনা জমেছে। এসব এলাকায় ময়লা গড়িয়ে পানিতে পড়ছে। ফলে সুরমা নদীর পানি অনেকটা পচা ও কালচেও হয়ে আছে। এ ছাড়া নদীর তলদেশ প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্যে ভরাট হয়ে স্থানে স্থানে চর ও ছোটখাটো টিলার মতো হয়ে পড়েছে। এসব আবর্জনা অপসারণে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযানও পরিচালনা করে না। এতে দুর্ভোগ সহ্য করেই আশপাশের বাসিন্দাদের বসবাস করতে হচ্ছে।
তবে সিলেট সিটি করপোরেশন বলছে, দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরপর নদীতীরের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়ে থাকে। নিয়মিতই ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়। কেউ যেন আবর্জনা না ফেলেন, সে জন্য সিটি করপোরেশন সচেতনতাও চালিয়ে থাকে। আশপাশের মানুষ সচেতন না হলে এটা রোধ করা একটু কঠিন।
সিটি করপোরেশনের বক্তব্য যদি সঠিক হয়ে থাকে মানে নদীতীরের ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত অপসারণ করা হয়, তাহলে নয়টি স্থানে এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো? কেনই-বা নদীর মধ্যে আবর্জনার টিলা বা চর জেগে উঠেছে? এখানে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অবশ্যই দায় আছে। তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ উদ্যোগ সিটি করপোরেশনসহ সরকারি কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। সেখানে পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ও স্থানীয় তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করা গেলে সুরমা নদীপারের সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।