হবিগঞ্জ পৌরসভা

গাছ কাটা ছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায় নেই?

মানুষের মধ্যে সৌন্দর্যের ধারণার যে সূচনা, তার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে প্রকৃতি। আবার সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগে প্রকৃতিই থাকে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এমন নিদারুণ বাস্তবতা নিয়েই প্রকৃতির প্রতি প্রেমহীন একটা সমাজ যেন গড়ে উঠছে। আমাদের সরকারি প্রকল্পগুলো এভাবেই বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় নানা সময়ে। হবিগঞ্জে পৌর মিলনায়তনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে হবে, এর জন্য কাটতে হবে গাছ, উজাড় করতে হবে পাখির আবাসস্থল। গাছ, পাখি কেন সৌন্দর্যবর্ধনে বাধা হবে, তা কোনো যুক্তিতেই আমাদের কাছে ধরা পড়ে না।

হবিগঞ্জের শাহ এ এম এস কিবরিয়া পৌর মিলনায়তনের চারপাশ ঘিরে আছে আকাশমণি, শিলকড়ই, মেহগনি, জলপাইসহ নানা জাতের গাছ। সেসব গাছের ছায়া গিয়ে পড়ে পাশের একটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে সকাল-বিকেল খেলাধুলা করে কিশোর-তরুণেরা। সবুজ গাছগাছালি ঘিরে বসে পানকৌড়ি, শালিক, কোকিল, চড়ুইসহ নানা প্রজাতির পাখির মিলনমেলা। একটা সময় এটিই ছিল মফস্‌সল শহরগুলোর নৈসর্গিক চিত্র। যদিও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে মফস্‌সল শহরগুলোর সেই সৌন্দর্য বিলীন হতে চলেছে। হবিগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষও ‘যুগের বাতাস’ গায়ে লাগায় সেই পথে হাঁটতে চায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ‘সৌন্দর্যবর্ধনের’ জন্য মিলনায়তনের চারপাশের সীমানা ঘেঁষে বেড়ে ওঠা গাছগুলো কাটার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে গাছ কাটার জন্য দরপত্রও চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের সামনের গাছও কাটা হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে কাটা পড়বে মোট ১০৮টি গাছ। অধিকাংশ গাছের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।

গাছ কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, মিলনায়তনের গাছগুলোর কারণে সেখানে জঙ্গল তৈরি হয়েছে। এ জন্য সেখানকার গাছগুলো কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে। আর অন্য দুই জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছে নর্দমা নির্মাণের জন্য। তাঁর দাবি, এসব গাছে পরিবেশের সৌন্দর্যহানি হবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছই কেন কেটে ফেলতে হবে। এ যেন মাথাব্যথার জন্য মাথাই কেটে ফেলা! পরিবেশবিদেরা বলছেন, গাছগুলো কাটলে, বিশেষ করে মিলনায়তনের গাছগুলো না থাকলে সেখানকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। ওই এলাকা পাখিশূন্য হয়ে যাবে। তাই গাছ রেখেই হোক সৌন্দর্যবর্ধন। আশা করি, পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে এবং দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় নিজেরা আরও আন্তরিক হবে।