সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা কী করছে

রোজার শুরুতে এবার গরম পড়ায় পানির চাহিদাও বেড়ে গেছে, বিশেষ করে ইফতার ও সাহ্‌রির সময়। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা চাহিদামতো পানি সরবরাহ করতে না পারায় শহরের বাসিন্দারা কষ্টে আছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুলবাগ, শেওড়াপাড়া, লালবাগ, রায়েরবাগ ও দক্ষিণখান এলাকায় পানি সমস্যা বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবাবগঞ্জ লেন, আবদুল আজিজ লেন, ললিত মোহন দাস লেনসহ আশপাশের কিছু এলাকায় রোজার শুরু থেকে ওয়াসার পানি না পাওয়ার অভিযোগ এসেছে বাসিন্দাদের কাছ থেকে।

ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কিছু জায়গায় গভীর নলকূপে উৎপাদন কমেছে। রমজানে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং কয়েকটি এলাকায় চাহিদার তুলনায় গভীর নলকূপ কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে। শেওড়াপাড়া এলাকার শাপলা সরণির একজন বাসিন্দা বলেছেন, ‘পাঁচতলা ভবন। নয়টি পরিবার থাকে। দৈনিক গড়ে এক গাড়ি পানি দিয়ে কাজ সারছি। তবে সব সময় সিরিয়াল দিয়েও ওয়াসার গাড়ি পাওয়া যায় না।’

ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা এলাকাভিত্তিক পানির সমস্যার কথা স্বীকার করলেও কীভাবে এর সমাধান হবে, সেটা তঁাদের জানা নেই। ঢাকা শহরের পানি সরবরাহ করা হয় প্রধানত ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। ২০১০ সালে ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ পানি উপরিভাগের উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু এখনো ৭০ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।

পানির পাম্পগুলো সুরক্ষার ব্যাপারেও ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের তেমন নজর নেই। কোথাও নলকূপ বন্ধ হলে মেরামত করতে সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করে থাকে টাকার বিনিময়ে। আবার গ্রাহকেরা টাকা দিয়েও প্রয়োজনীয় পানি পান না। মালিবাগ এলাকার একটি পাম্প নষ্ট হওয়ায় মসজিদ থেকে মুসল্লিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন বাড়ি থেকে অজু করে আসেন, মসজিদে অজু করার জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই। মালিবাগের মতো পরিস্থিতি ঢাকার আরও অনেক এলাকায় থাকলেও ঢাকা ওয়াসা নির্বিকার।

ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনে পানির গাড়ির চাহিদা জানানো হলে গাড়িতে করে পানি বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ঢাকা ওয়াসার প্রতিটি ছয় হাজার লিটারের বড় গাড়ির পানির দাম ৬০০ টাকা। তবে শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পানির গাড়ির জন্য সিরিয়াল দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে গাড়ি পাওয়া যায় না। আবার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থও দিতে হয়।

এদিকে পত্রিকান্তরের খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর নেমে আসায় প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ভাটির সময়ে পানি পাওয়া যায় না, জোয়ারের সময়ে যে পানি পাওয়া যায়, তাতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি। চট্টগ্রামে দিনে ৫০ কোটি লিটার পানি চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ৪৫ কোটি লিটার।

একদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা পাল্লা দিয়ে পানির দাম বাড়িয়ে চলেছে, অন্যদিকে গ্রাহকদের অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। এমনিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, সেটি পান করা যায় না। ফুটিয়ে পান করতে হয়। পানি সমস্যার সমাধান ওয়াসাকেই খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণ কোনো অজুহাত শুনতে চায় না।