সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সড়কে পুলিশ বক্স

অপরিকল্পিত কোনো স্থাপনা নয়

রাজধানী ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, এটি নতুন কথা নয়। এ নিয়ে সবারই হা–হুতাশ আমরা দেখি। এ শহরের অন্যতম সমস্যা সড়কে বিশৃঙ্খলা। ঢাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল আদৌ বন্ধ হবে কি না, আমরা জানি না। একের পর এক মেয়াদ বাড়িয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও এ শহরকে অনেকটা স্থবির করে দিয়েছে। আর ফুটপাত দখল তো আছেই।

সংবাদমাধ্যম থেকেই নানা সময়ে আমরা জানতে পারি, ফুটপাত দখলের কোটি কোটি টাকার চাঁদার ভাগ যায় পুলিশের পকেটেও। ফলে ফুটপাত দখলমুক্ত করা অতটা সহজ ব্যাপার নয়। তার ওপর অনেক জায়গায় পুলিশ নিজেই ফুটপাত বা সড়ক বিভাজক দখল করে রাখে।

যেমনটা আমরা দেখছি আসাদগেট মোড়ে। সেখানে নির্মাণাধীন একটি পুলিশ বক্স উচ্ছেদ করতে গিয়ে হুমকির শিকারও হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। রাজধানী শহরকে নিয়মশৃঙ্খলায় ফেরাতে সিটি করপোরেশন ও পুলিশ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। সেখানে দুই সংস্থার কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সম্প্রতি আসাদগেটে সড়ক বিভাজকের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের বসার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছিল। এর ফলে আসাদ অ্যাভিনিউয়ে সড়ক বিভাজকে শহীদ আসাদের স্মৃতিফলকটি ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। পরে নির্মাণাধীন পুলিশ বক্সটি উচ্ছেদ করতে এসে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।

পুলিশের কর্মকর্তারা শুধু বাধাই দেননি, তাঁদের গ্রেপ্তার ও উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত ডাম্প ট্রাক ও পে-লোডার জব্দ করে পাঠানোর হুমকিও দেন। এরপর সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা চলে আসেন। এ ঘটনা সম্পর্কে ডিসি ট্রাফিক শাহেদ আল মাসুদের বক্তব্য, এখানে হুমকির কিছু নেই। কোনো স্থাপনা ভাঙতে হলে তো ম্যাজিস্ট্রেটসহ কিছু প্রক্রিয়া আছে। হুট করে কেউ এসে একটা ঘর ভেঙে দিয়ে গেল, এভাবে তো সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ চাইলেই কি সড়ক বিভাজকে স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে? পুলিশের এমন আচরণের বহিঃপ্রকাশ কোনোভাবেই কাম্য নয়। সড়কে পুলিশের দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বক্সের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সেটা হতে হবে পরিকল্পিতভাবে।

পুলিশ চাইল বা মনে করল আর সড়ক বিভাজক বা যেকোনো জায়গায় একটি স্থাপনা তৈরি করে ফেলল—এমন হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, বিষয়টি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এবং একটি পরিকল্পনার আওতায় হওয়া উচিত।

আসাদ গেটের ঘটনায় পুলিশ ডিএনসিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

আমরা আশা করি, উভয় পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে এগিয়ে আসবেন। পরস্পরবিরোধী অবস্থান নয়, নগর দেখভাল বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উভয় সংস্থাকেই দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেখতে চাই আমরা।