সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

এসব ওয়েবসাইট খোলার যৌক্তিকতা কী

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেদের কৃতিত্ব প্রমাণের জন্য নতুন নতুন প্রকল্প করে থাকে। তার উপযোগিতা আছে কি নেই, সেটা যাচাই করা হয় না। ফলে সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়। আগে অবকাঠামো নির্মাণে এসব অপচয় হচ্ছে, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর নানা প্রকল্প।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ তিন কোটি টাকা ব্যয়ে জনগণের সঙ্গে সরকারের সরাসরি যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে ‘জনতার সরকার’ নামের যে ওয়েবসাইট তৈরি করেছিল, তার ব্যবহার নেই বললেই চলে।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ অ্যাপটি উদ্বোধনকালে বলেছিলেন, এটি দেশের সাধারণ মানুষ ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করবে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, জনতার সরকার ওয়েবসাইটটি তেমন কাজে লাগছে না।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল, সরকারের উন্নয়নকাজের বিষয়ে নাগরিকদের মতামত ও চিন্তাভাবনা জানা; যাতে সরকার জনগণের বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি জেনে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে বিষয়টি হয়তো ঠিক আছে।

কিন্তু যেখানে সরকারের নীতি-পরিকল্পনায় আমলাতন্ত্রই মুখ্য ভূমিকা রেখে থাকে, সেখানে এই ধরনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা কম। ওয়েবসাইটটির তথ্য অনুযায়ী, চালুর পর থেকে এর নিবন্ধিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ২০৮ জন। জরিপের সর্বশেষ প্রশ্ন তোলা হয়েছে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর। নতুন নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করে অলস বসিয়ে রাখার কারণ কী?

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ অ্যাপগুলো ব্যবহার না করার বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা–ও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেছেন, অ্যাপ ও সাইটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে পরবর্তী সময়ে সেগুলো কী অবস্থায় থাকে। কিন্তু এই কর্তৃপক্ষের ওপরে যে কর্তৃপক্ষ আছে, তারা কী করছে?

এর আগে আইসিটি বিভাগ ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ অ্যাপ তৈরি করেছিল, যার ৫০০ নিখোঁজ ও বাকি ১০০ বেহালদশায় আছে বলে ২০২০ সালে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। অ্যাপগুলো যদি কাজেই না লাগে, তাহলে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে কেন তৈরি করা হয়েছিল?

বাংলাদেশে জনগণের মতামত নিয়ে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প হওয়ার দৃষ্টান্ত কম। এমনকি জনপ্রতিনিধিদের কথাও খুব একটা গ্রাহ্য করা হয় না। অবশ্য আমাদের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি এসব নিয়ে খুব মাথাও ঘামান না। তাঁরা বিনা শুল্কের দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট পেলেই ধন্য হয়ে যান।

জনতার সরকার নামের ওয়েবসাইটটি কেন অব্যবহৃত থাকল, তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। রহস্যজনক হলো প্রায় এক মাস ধরে চেষ্টা করেও এই প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খানের সঙ্গে প্রথম আলো যোগাযোগ করতে পারেনি।

মুঠোফোনে কল করে, খুদে বার্তা পাঠিয়ে এবং তাঁর কার্যালয়ে গিয়েও এ বিষয়ে বক্তব্য না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। পরিচালকসহ এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যেসব ওয়েবসাইটে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই, সেসব ওয়েবসাইটের খোলার যৌক্তিকতা কী।