সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

লোহাগড়ায় চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হোক

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে একের পর এক স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো মানুষের চাহিদা কতটা পূরণ করতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। অনেক জায়গায় এখনো যন্ত্রপাতি নেই, অনেক জায়গায় নেই চিকিৎসক। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় একটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে।

উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের করফা গ্রামে ১৪ মাস আগে চালু করা হয় এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক বছর পার হয়ে গেলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী ও একজন অফিস সহায়ক দিয়ে যেনতেনভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, তা–ও এই দুজন কর্মীকে অন্য ইউনিয়ন থেকে এখানে প্রেষণে আনা হয়েছে। তার মানে মল্লিকপুর ইউনিয়নের এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এখনো কোনো নিজস্ব লোকবল নেই।

এমন পরিস্থিতিতে মল্লিকপুরের মা ও শিশুরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রতিদিনই রোগী আসেন। রোগীর সংখ্যাও কম নয়, অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে নারী রোগীই বেশি। পুরুষ রোগীরাও আসেন সাধারণ চিকিৎসা নিতে। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না তাঁরা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের। উপজেলা শহরের হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁদের। যেকোনো রোগশোকে তাঁরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতেই ছুটে যান আগে। বিশেষ করে প্রসূতি ও নবজাতকদের জন্য এটি বড় ভরসাস্থল।

লোহাগড়া-ইতনা সড়কের পাশে মধুমতী নদীর পাশ ঘেঁষে দুটি তিনতলা ভবন নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অবস্থিত। এর মধ্যে একটি হাসপাতাল ভবন, আরেকটি চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনে রয়েছে পাঁচ শয্যা করে ১০ শয্যার ২টি ওয়ার্ড ও ১০টি কেবিন। আছে আধুনিক অস্ত্রোপচারকক্ষ।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য পদ আছে ১০টি। এর মধ্যে ২ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), ১ জন ফার্মাসিস্ট, ৪ জন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক ১ জন। এর সব কটি পদ হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকেই শূন্য রয়েছে। একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এত দিন পর একজনও কর্মকর্তা-কর্মী নিয়োগ না হওয়াটা দুঃখজনক। প্রয়োজনীয় লোকবলই যদি না থাকে, তাহলে এত বিপুল অর্থ খরচ করে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র করে কী লাভ হলো?

উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে রোগীর অসহনীয় চাপের বিষয়টি আমাদের কারও অজানা নয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে তোলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চাহিদা অনুসারে লোকবলসহ পূর্ণাঙ্গভাবে চালু রাখতে পারলে জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোর সেই চাপ সামাল দেওয়াও সহজ হয়। এ ছাড়া বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের ওপরও নির্ভরতা কমে।

আমরা আশা করব, লোহাগড়ার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটিতে দ্রুত চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।