সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

রাজশাহীর এমন নগরায়ণ উদ্বেগজনক

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইতিমধ্যেই বসবাসের যোগ্যতা হারাতে বসেছে। পুকুর ও জলাশয়গুলো ভরাট করে বড় শহর দুটির বিপদ ডেকে আনা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে সুন্দর ও গোছানো শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর অবস্থাও একই দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারণ, দিন দিন পুকুর ও জলাশয়শূন্য হয়ে যাচ্ছে শহরটি, যা খুবই উদ্বেগজনক।

রাজশাহীর জলাশয় ও পুকুর ভরাট–দখল নিয়ে প্রথম আলো নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে। কিন্তু পুকুর ভরাটের কোনো কোনো ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তা কার্যকরী কোনো প্রভাব ফেলেনি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পুকুর ভরাটের তালিকা করে থাকে। তাদের মতে, গত এক দশকে রাজশাহী শহরের ৯৭ শতাংশ পুকুর ভরাট হয়ে গেছে।

রাজশাহীতে পুকুর ভরাটে জড়িত প্রভাবশালী একটি মহল। তারা কোনো পুকুর সস্তায় কিনে নেয়, এরপর মূল কাগজপত্রে পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করে ভিটা বা ধানি জমি বানিয়ে ফেলে। সে অনুযায়ী খাজনাও পরিশোধ করা হয়। একপর্যায়ে টলমলে পানির পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলা হয়। প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। রাজশাহীর পুকুরগুলো একের পর এক এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে। যার সর্বশেষ নমুনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে নগরের আরাজি শিরোইল মৌজার একটি পুকুরের ক্ষেত্রে। তবে স্বস্তিদায়ক বিষয় হচ্ছে, প্রথম আলোতে খবর প্রকাশের পর এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। যার কারণে পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা না হলেও, কোনো দাপ্তরিক আদেশ না থাকলেও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সইয়ে পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রাজশাহী নগরে পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের চার দফা নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানানো হলেও অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কখনো পুকুর ভরাটের কাজ এলাকাবাসী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়। মামলা ও জরিমানা হয়। কিন্তু দিন শেষে পুকুর আর রক্ষা হয় না।

একটি নগরে পরিবেশগত কারণে জলাশয় বা পুকুর থাকা জরুরি। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানির উৎসের জন্য জলাশয় বা পুকুরের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, শিরোইল মৌজার পুকুরটি হারিয়ে যাবে না, যেভাবে শহরের অন্যান্য পুকুর হারিয়ে গেছে। রাজশাহীর বসবাসযোগ্যতা অটুট রাখতে স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে কাজ করতে হবে সমন্বিতভাবে।