করোনা মহামারির কারণে দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্য নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের হার বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তবে এটিও বলতে হয় যে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার অনেক কর্মসূচি নিয়েছে, যা বেশ প্রশংসনীয়।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অনেকগুলো উপায়ে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা দুস্থ, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ মানুষকে নগদ টাকা বা খাদ্যপণ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে সরকার।
তবে দুস্থদের এসব সহায়তায় ব্যাপক নয়ছয় হওয়ার অভিযোগ ওঠে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুস্থ নারীদের চাল সহায়তা দেওয়ার সরকারি কার্যক্রম ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) ক্ষেত্রে। গাইবান্ধায় দুস্থ নারীদের চালে ভাগ বসিয়েছেন সচ্ছলেরা। বিষয়টি খুবই গুরুতর।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় ভিডব্লিউবির কার্যক্রম নিয়ে প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভিডব্লিউবির কার্ডের বড় একটি অংশই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানরা ভাগাভাগি করে নিয়ে নিয়েছেন।
তাঁরা নিজেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের এ কার্ড দিচ্ছেন। আরও দুঃখজনক হচ্ছে, সচ্ছল পরিবার সে কার্ড পাচ্ছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সারা দেশে মাঠপর্যায়ে ভিডব্লিউবি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা দুস্থ ও অতিদরিদ্রদের স্বনির্ভর করতে সহায়তার জন্য এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। উপকারভোগীরা দুই বছর প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা পাবেন।
তার মানে গাইবান্ধা-৩ আসনে অনেকেই প্রতি মাসে এ ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন, যাঁদের পাওয়া কোনোভাবেই উচিত ছিল না। যেমন বরিশাল ইউনিয়নে ২৯৩ সুবিধাভোগীর মধ্যে ৬১ জন সচ্ছল ও বিত্তশালীর পরিবারের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের কেউ চার-পাঁচ বিঘা জমির মালিক, কেউ সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী পরিবারের। অন্যান্য ইউনিয়নেও কমবেশি এমনই চিত্র।
একটি দুস্থ পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রতি মাসে বিনা মূল্যে ৩০ কেজি চাল বড় সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কিন্তু শুধু গাইবান্ধার একটি আসনে যে বাস্তবতা দেখা গেছে, দেশের অন্য উপজেলাগুলোতে ভিডব্লিউবি কার্যক্রম কীভাবে চলছে, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
চলতি জুন মাস পর্যন্ত ভিডব্লিউবির তালিকা সংশোধনের সুযোগ আছে। এরপর অসচ্ছল লোকদের সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকবে না। ফলে অতিসত্বর সচ্ছল লোকদের বাদ দিয়ে প্রকৃত অসচ্ছল ব্যক্তিদের ভিডব্লিউবি কার্ড বিতরণ করা হোক।
ভিডব্লিউবির কার্যক্রমে আরও বেশি স্বচ্ছতা আনা হবে সেটিই আমরা আশা করছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দুস্থ নারীদের জন্য সরকারের এমন একটি প্রশংসনীয় কার্যক্রম কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়ার সুযোগ নেই।