ইটভাটার দৌরাত্ম্যের সঙ্গে পরিবেশের বিপর্যয় অনেকটা সমার্থক। দেশে ইটভাটা গড়ে তোলার নীতিমালা থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হয় না, এর মধ্যে আছে আবার অবৈধ ইটভাটাও। বছরের পর বছর ধরে সেগুলো চলতে থাকে। যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় তিতাস নদের পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা। সেগুলোর বিরুদ্ধে নানা সময়ে অভিযান চালিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ১৫-২০ বছরে তিতাস নদের জলাশয় ভরাট করে সরাইলের এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আরও ইটভাটা নির্মাণ ও পুরোনো ইটভাটার জায়গা বাড়ানোর জন্য নদের জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে এমন অবৈধ ইটভাটাও আছে, যার মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকলেও ভাড়ায় ইটভাটাটি চালাচ্ছেন অন্য ব্যক্তি। এই ইটভাটার নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর সনদ। বিগত সরকারের আমলে যেভাবে চলে এসেছে, এখনো সেভাবেই চলছে। বরং ইটভাটাটির জায়গা সম্প্রসারণের জন্য পুরোনো ইট, নষ্ট ইট ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নদ। ফলে আঞ্চলিক মহাসড়কটির পাশের একটি খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
নদী ও পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় সংগঠকেরা বলছেন, এখানে যে যেভাবে পারছে, নদ-নদী দখল করছে, যা পরিবেশের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবেশ অধিদপ্তরের বক্তব্য, জেলায় ৫৬টি অবৈধ ইটভাটা আছে। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্যের মালিকানার ইটভাটাসহ সব কটি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হবে। না পারলে মামলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইটভাটার বিষয়ে তিনি জেনেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কেউ ইট উৎপাদন করতে পারেন না। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোনো ইটভাটা চলার সুযোগ নেই। অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে কোনোভাবেই সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। বছরের পর বছর ধরে চলা অবৈধ ইটভাটাগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করা হোক। বৈধ ইটভাটাগুলোর ক্ষেত্রেও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। নদের জলাশয় ও খাল উদ্ধার করা হোক। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন।