সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জোর করে পদত্যাগ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে নানা জায়গায় বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিলেও অনেক জায়গায় এখনো এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জোর করে পদত্যাগের বিষয়টি তীব্র সমালোচনা তৈরি করেছে। উপাচার্যসহ অন্য কর্মকর্তাদের পদত্যাগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একপ্রকার স্থবির হয়ে আছে। সেখানে স্কুল–কলেজেও এমন ঘটনা শিক্ষা খাতের পরিবেশ আরও বেশি নষ্ট করছে। আমরা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

গত দুই সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্কুল–কলেজে প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগের চেয়ে জোরপূর্বকের ঘটনাই বেশি। এসব শিক্ষক ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের নানা অভিযোগ আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ থাকলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়মতান্ত্রিক ও যথাযথ প্রক্রিয়া আছে। সেসব কোনোভাবেই অনুসরণ করা হচ্ছে না। গত বুধবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে কলেজটির অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন অন্তত ৪০ জন। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁরা অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। পরে অধ্যক্ষ মাসুদুল হকের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা শহরের বিজয় চত্বরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে অধ্যক্ষ মাসুদুল হককে কলেজে ফিরিয়ে আনা হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আমরা এ ব্যাপারে সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে এ–ও আহ্বান জানাই, শিক্ষার্থী পরিচয়ে জোরপূর্বকভাবে কারা এ ঘটনা ঘটাল, তাদেরও শনাক্ত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিং করেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে বল প্রয়োগ করা যাবে না এবং কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত করা যাবে না। যে যত অন্যায় করুক না কেন, নিয়মমাফিক যত দ্রুত পারা যায়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এ–ও স্বীকার করেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হলো মাধ্যমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা সরকারি; কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষায় যে ধরনের অনিয়ম–অবহেলা হয়েছে, তা অনেক বেশি হয়েছে।

আমরা আশা করব শিক্ষা উপদেষ্টার এমন বার্তা সবার কাছে পৌঁছাবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনকে আবারও সচল ও সজীব করে তুলতে সবার ভূমিকা কাম্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সম্পর্ক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি। সেখানে অনভিপ্রেত ও অনাকঙ্ক্ষিত কিছু ঘটুক, আমরা চাই না। এ ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটিই কাম্য।