দেশের নৌ চলাচল এখনো অনিরাপদ। যাত্রী সুরক্ষা এখানে বরাবরই অবহেলিত। অতীতে বড় বড় নৌ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মারা যাওয়ার পরও এ নিয়ে নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। কালবৈশাখী মৌসুমে নৌ চলাচল কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা নিশ্চয়ই ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকলে তো কথাই নেই। সেই ঝুঁকি নিয়েই দেশের উপকূলীয় জেলা ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোতে চলাচল করছেন সেখানকার মানুষ। তবে গুরুতর বিষয় হচ্ছে, সেখানে চলাচলকারী নৌযানগুলোর কোনো ফিটনেস নেই। যাত্রীদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও রাখা হয় না এসব নৌযানে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে বিপুলসংখ্যক যাত্রীর প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেটি ঘটতে দিতে না চাইলে এখনই কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভোলা জেলায় নদী ও সাগরমোহনার মধ্যে ৯টি ইউনিয়নসহ ৭৪টি চরাঞ্চলে নৌপথের সংখ্যা ৬৬। গত মার্চ মাস থেকেই এসব নৌপথ ভয়াবহ হয়ে আছে। সামনে বর্ষাকাল, এ সময় স্রোতের তীব্রতা আরও বাড়ে। প্রবল ঢেউ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ছোট ট্রলার দিয়ে উত্তাল নদী পাড়ি দেন যাত্রীরা। পাঁচ লাখ বাসিন্দার এই জনপদে যাতায়াতের জন্য এসব ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানই একমাত্র সম্বল। সাধারণ মানুষ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন সেখানে।
অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নৌনিরাপত্তা বিভাগ তা নিতে পারছে না। কারণ, এখানে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। অথচ এখানে নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিত করাটা সরকারের দায়িত্ব। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভোলার বেশ কিছু নৌপথ আছে, যেখানে চাইলেই ফেরি চালু করা যায়। স্থানীয় লোকজন ফেরি চালুর জন্য দাবি জানিয়েও আসছেন। কিন্তু এর প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্ণপাত নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকাগামী লঞ্চগুলোকে যদি এসব চরাঞ্চলে ঘাট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে চরাঞ্চলের যাত্রীদের নৌ চলাচল অনেকটাই নিরাপদ হয়।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেছেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব পেলে পন্টুন বসিয়ে লঞ্চঘাট সৃষ্টি করে বড় বড় লঞ্চ নোঙর করাতে চেষ্টা করব।’ আমরা আশা করব, স্থানীয়দের লিখিত আবেদনের জন্য অপেক্ষায় না থেকে তিনি স্ব–উদ্যোগী হয়ে এমন পদক্ষেপ নেবেন। আমরা আরও জানতে পারছি, বিভিন্ন নৌপথে জেলা পরিষদ ঘাট ইজারা দিয়ে বিপুল রাজস্ব আয় করছে, কিন্তু যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কি তার দায় জেলা পরিষদ নেবে?