সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নবীনগর-আশুগঞ্জ মহাসড়ক

এক প্রকল্পে এত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা কেন

সড়ক-মহাসড়ক কিংবা সেতু নির্মাণের প্রকল্প নিয়ে এমন অভিযোগ কেন আমাদের বারবার দেখতে হয়? প্রকল্প শুরু হয়েছে, কিন্তু শেষ হতে বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। আরও দুঃখজনক হচ্ছে, নির্মাণকাজ নির্বিঘ্ন শুরু করতে প্রকল্পের শুরুতে যে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার, তাতেই গলদ থেকে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর-আশুগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণকাজ দেখে আমাদের হতাশ হতেই হয়। একের পর এক ভুলের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

আঞ্চলিক মহাসড়কটি হয়ে গেলে আশুগঞ্জের সঙ্গে জেলা সদর, আশুগঞ্জসহ সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বর্তমানে নবীনগর থেকে ঢাকাসহ বা অন্য কোনো শহরে যাতায়াতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা অথবা পার্শ্ববর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ঘুরে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা-ধনবাড়িয়া হয়ে যেতে হয়। এতে ঘুরে যেতে হয় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ। আবার নবীনগর থেকে জেলা সদরে যাতায়াতে স্পিডবোটে করে কিংবা পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যেতে হয়।

অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটির নির্মাণকাজের ছয় বছরে এক কিলোমিটার অংশের কাজও শেষ হয়নি। তিন দফায় প্রকল্পের সময় বেড়েছে চার বছর, বাড়ানো হয়েছে ব্যয়ও। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঠিকাদারের গাফিলতি, প্রকল্পের ভুলসহ চার কারণে মহাসড়কে নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ভাষ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, বহুমুখী জটিলতা ও সমস্যায় আটকে আছে মহাসড়কটির নির্মাণ। সওজ থেকে জানা যাচ্ছে, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, ঠিকাদারের ভুলে সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারা, ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণে বিশেষজ্ঞদের ভুল ও প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের কারণে প্রকল্পটির বর্তমান এ হাল। এর ফলে কি এটিই স্পষ্ট হয় না, যথাযথভাবে বা আরও নিবিড়ভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই ও সে অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। এত সব সমস্যা বা সম্ভাব্য জটিলতা নিয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু করার মানে কী? দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করা ঠিকাদার কীভাবে কাজ পেয়েছেন, সেটিও দেখার বিষয়। তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

এ প্রকল্পে ৯টি সেতু ও ১৩টি কালভার্ট করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি বড়সহ আটটি সেতু নির্মাণ করা হয়ে গেছে। ফলে নদী ও বিলের ওপর নির্মিত সেতু-কালভার্ট থাকলেও নেই কোনো সংযোগ সড়ক। কয়েক বছর ধরে সেতু ও কালভার্টগুলো পড়ে আছে। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, নির্মাণ করা কালভার্টের উচ্চতা অনেক কম। ফলে বর্ষাকালে এসবের নিচ দিয়ে নৌকা চলাচল ব্যাহত হবে। এ ছাড়া নদী ও বিলগুলো ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকবে।

নদী ও বিলের ক্ষতি না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মহাসড়কটির কাজ শেষ করা হোক। প্রকল্পের নানা জটিলতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিন। এভাবে প্রকল্পটি ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না।