সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কৃষকেরা কি কোনো সহায়তা পাবেন না

এক বছরে তিনটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানল দেশের উপকূলে। দুর্গত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে আমরা দেখে থাকি—মানুষের হতাহত, ঘরবাড়ি ধস বা গাছপালা উপড়ে পড়া, বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং কৃষির ক্ষয়ক্ষতি। ভুক্তভোগীদের ত্রাণসহায়তা হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে খাবারদাবার, ঢেউটিন বা নগদ অর্থসহায়তা দেওয়া হয়।

তবে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি পোষানো অনেকটা সময়সাপেক্ষ হয়ে যায়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আঘাত হানার পরও তেমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে এতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একটি জটিলতাও তৈরি হয়েছে, যার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে সন্দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাইল ধানচাষিদের।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আঘাত হানে ১০ দিন আগে। এ ঝড়ের ধাক্কায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এখনো অনেক জায়গায় ধানখেত ডুবে আছে পানিতে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। জোয়ারের কারণে লবণাক্ত পানিতেও টিকে থাকে, তাই এখানকার অনেকগুলো ইউনিয়নে কৃষকেরা রাজশাইল ধান চাষ করে থাকেন।

এবারও রাজশাইল ধানে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বাউরিয়া, কালাপানিয়া, সন্তোষপুর, মুছাপুর, মগধরা ও উড়িরচর ইউনিয়নের বেশির ভাগ খেত। আর সপ্তাহখানেক সময় পেলে ধান ঘরে তুলতে পারতেন কৃষকেরা। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ মেতে ওঠা হলো না কৃষক পরিবারের।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সন্দ্বীপের ৬৪০ হেক্টর জমির রাজশাইল ধান নষ্ট হয়ে গেছে পুরোপুরি। কোনো কৃষক মাত্র ধান কাটা শুরু করেছিলেন, তা আর ঘরে তুলতে পারেননি। ক্ষতিগ্রস্ত খেত থেকে ধান সংগ্রহের চেষ্টায় রয়েছেন অনেক কৃষক। তবে নতুন করে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকসংকট। ডুবন্ত পানির ধান কাটতে শ্রমিকেরা আগ্রহী হচ্ছেন না। যাঁদের পাওয়া যাচ্ছে, তাঁরাও বেশি মজুরি চাচ্ছেন। ফলে অনেক খেতে পানিতে ডুবে থাকা ধানে আবার চারা গজানো শুরু হয়েছে।

দুঃখজনক হচ্ছে, সর্বস্বান্ত কৃষকেরা এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহায়তা বা ত্রাণ পাননি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বক্তব্য, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য সার, বীজসহ অনুদান এলে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে তা বিতরণ করা হবে।

তবে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সরকার সব ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক এবং নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখা এবং আচরণবিধি পালনের জন্য নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের ত্রাণ দেওয়া যাবে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আপাতত সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ নেই।

এমন পরিস্থিতিতে কৃষকেরা ত্রাণসহায়তা পেতে আরও বেশি দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে। অনেকে ত্রাণবঞ্চিত হতে পারেন। কোনোভাবে কি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো যায় না?