গত রোববার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১১ লাখ ১২ হাজার ৩৭২ জন। পাস করেছেন ৮ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৯ জন।
প্রায় এক–চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন বলা যায়। দুঃখজনক হচ্ছে, ৪২টি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেননি। সেই তালিকায় আছে ঢাকার একটি কলেজও। এসব কলেজ কীভাবে চলছে, সেটিই এখন প্রশ্ন।
শূন্য পাস ৪২ কলেজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে—১৬টি। এ ছাড়া যশোরে সাতটি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন পাঁচটি, রাজশাহীতে চারটি, ময়মনসিংহে চারটি, চট্টগ্রামে তিনটি এবং কুমিল্লায় একটি কলেজ থেকে কেউ পাস করতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৫টিতে পরীক্ষার্থী ছিলেন মাত্র একজন করে। কেবল একটিতে সর্বোচ্চ ২১ জন, আরেকটিতে ১৯ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাকিগুলোতে কয়েকজন করে পরীক্ষার্থী ছিলেন।
কলেজগুলোতে খোঁজখবর নিয়ে ও সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। এতে যে চিত্র দেখা গেছে, তা ভয়াবহ। রাজধানীর উত্তর মুগদায় এশিয়ান আইডিয়াল কলেজের সামনে ডিজিটাল ব্যানারে ভর্তির বিজ্ঞাপনে লিখে রাখা হয়েছে সব শ্রেণির মতো এইচএসসিতেও তাদের পাসের হার শতভাগ। অথচ এবার কলেজটি থেকে একজন মাত্র শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
কলেজগুলোর বেহালই বলে দিচ্ছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে পাস করা সম্ভব। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকান্দি ইউনিয়নের ডা. দেলোয়ার হোসেন মেমোরিয়াল কলেজের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ দুই বছর ধরে। অধ্যক্ষ থাকেন আরেক উপজেলায়, মাঝে মাঝে কলেজে আসেন।
কলেজ থেকে কোনো বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না। বেশির ভাগ সময় দোতলা ভবনের দরজায় তালা দেওয়াই থাকে। দরজা-জানালায় ধুলাবালুর স্তর। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ আদর্শ কলেজে গিয়েও দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা। শিক্ষা বোর্ড ও কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি থেকেই চালু রয়েছে বেশির ভাগ কলেজ। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কোনোরকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে এমপিওভুক্তির আশায়।
২০২১ সালে শূন্য পাস করা কলেজের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচটি। গত বছর সেটি দাঁড়ায় ৫০–এ। শিক্ষার্থী নেই, শিক্ষকসংকট—এমন কলেজগুলো কেন, কীভাবে চালু থাকে? এসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে স্বীকৃতি পায়, এটিও একটি রহস্য! আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারের বক্তব্য, কলেজগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে চাই।