সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি কেন

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থাকে এ দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। অনেকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মনোনীত হয়ে পছন্দের বিষয় পান, অনেকে পান না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অন্য রকম এক অনুভূতি নিয়ে ক্যাম্পাসজীবন শুরু করেন। এখন যে বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন, সেই বিষয়ের শিক্ষকই যদি না থাকে, তাহলে তাঁদের কেমন লাগবে? এমন ঘটনাই ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ক্ষেত্রে। বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস বিভাগের প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও বিভাগে এখনো কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে অন্য বিভাগ থেকে ‘ধার করা’ শিক্ষকেরা এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। এ ছাড়া এই বিভাগের জন্য কোনো অবকাঠামোও বরাদ্দ দেয়নি প্রশাসন। ফলে দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা, সেটিও আবার কক্ষটি খালি থাকা সাপেক্ষে। ফলে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বিভাগে শিক্ষক না থাকায় তাঁরা অনেকটাই অভিভাবকহীন। নিজেদের কোনো কক্ষ না থাকায় অনেকটাই ঠিকানাহীন। শিক্ষার্থীদের এমন মনে করাটা খুবই স্বাভাবিক।

চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইতিহাস বিভাগ চালুর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একই দিন বিভাগে জনবলকাঠামো নিয়োগেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখর। শেখ হাসিনা সরকার পতনের তিনি আত্মগোপনে থেকে পদত্যাগ করেন। বিতর্ক এড়াতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন নয়, এর আগে মার্কেটিং বিভাগ, এইচআরএম, ব্যবস্থাপনা, পরিসংখ্যান ও দর্শন বিভাগে একই ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা ভালো। তবে জনবল নিয়োগ সম্পন্ন না করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমেরও সুযোগ আছে। বর্তমান প্রশাসন ইতিমধ্যে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আশা করি, ওই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।’

বোঝাই যাচ্ছে, কোনো বিভাগে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে শিক্ষার্থী ভর্তির একটি সংস্কৃতি চালু আছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দ্রুত ইতিহাস বিভাগের নিয়োগপ্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হোক। সদ্য ক্যাম্পাসজীবন শুরু করেই শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ুক, তা আমরা চাই না।