জাহাজভাঙা শিল্পে বিস্ফোরণ

শ্রমিকদের নিরাপত্তা কত দিন উপেক্ষিত থাকবে

আবারও জাহাজভাঙা শিল্প ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হলো। এই শিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশদূষণ নিয়ে পরিবেশবিদ এবং অংশীজনেরা বহু বছর ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পরিস্থিতির খুব যে উন্নতি হয়নি, তা ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনাটিই বলে দিচ্ছে। 

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, এসএস করপোরেশন নামের ইয়ার্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জন দগ্ধ হন। দুজন ছাড়া বাকি সবাই মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। তাঁদের প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাতজনকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের তথ্যমতে, তিনজন ছাড়া বাকিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। রোববার পর্যন্ত এ বিস্ফোরণের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। 

দুই দশক ধরে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টার–এর খবর জানাচ্ছে, দুই দশকে জাহাজভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৫৭ জন। এ তথ্যই বলে দেয় এই শিল্পে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা কতটা অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সীতাকুণ্ডের ৩০-৩৫টি জাহাজভাঙা কারখানা থাকলেও শ্রমিকের নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ ও পরিবেশ রক্ষার বিচারে মাত্র চারটি কারখানার পরিবেশবান্ধব সনদ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষার জরুরি বিষয়গুলো উপেক্ষা করে কীভাবে এই কারখানাগুলো টিকে আছে?

এসএস করপোরেশন নামের ইয়ার্ডে বিস্ফোরণের কারণ এখন জানা যায়নি। তবে পত্রিকার খবর জানাচ্ছে, পরিত্যক্ত জাহাজটি কাটার আগে ইঞ্জিন রুমের জ্বালানির ট্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে তাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হন। অথচ জাহাজ কাটার আগে বর্জ্য, বিষাক্ত গ্যাস ও বিস্ফোরকমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেশির ভাগ মালিক সেই আইনের তোয়াক্কা করেন না বলেই জাহাজভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল থামছে না।

এটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে জাহাজভাঙা শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। স্থানীয় রড ও ইস্পাতশিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে কাঁচামাল, তার বড় একটা অংশ আসে এ শিল্প থেকে। পরিবেশবিদ ও অংশীজনদের দাবির কারণে এ শিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৮ পাস হয়। এই আইন অনুসারে বাংলাদেশ জাহাজ পুনর্জাতকরণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হলেও তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। এ ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়া অধিশাখা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা আশা করি, দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তা আর কত দিন উপেক্ষা করা হবে?