সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শিক্ষকদের চার মাস বেতন বন্ধ

কেশবপুরে এ সমস্যার দ্রুত নিরসন করুন

একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকতেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও সম্মানীয় ব্যক্তিরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকত তাঁদের। এখন সমাজে সেসব লোকের বড় অভাব বা থেকে থাকলেও তঁারা আজ কোণঠাসা। দুর্বত্তায়নের রাজনীতি সবকিছুকেই গিলে খেয়েছে।

সেখানে এখন স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের আধিপত্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তঁারা নিজেদের ক্ষমতাচর্চার কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছেন। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি যশোরের কেশবপুরে মহাদেবপুর রেজাকাটি বগা সেনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

সেখানে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অন্যায়ভাবে চার মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন আটকে দিয়েছেন। এতে ওই শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিদ্যালয়ের পরিচালনার কমিটির বর্তমান সভাপতি এম এম রুহুল আমিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিদ্যালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য করতে গিয়ে বাধা পেয়ে তিনি অন্যায়ভাবে বেতন বিলে স্বাক্ষর করছেন না। দলীয় ক্ষমতাশালী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতেও পারছেন না।

১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এমপিওভুক্ত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত সাতজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী। এর বাইরে প্রধান শিক্ষক, সাতজন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীর শূন্য পদে নিয়োগ পরিচালনা কমিটির হাতে। এই পাঁচ শূন্য পদে নিয়োগ নিয়ে বিরোধের জেরে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী রুহুল আমিন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর মোটা অঙ্কের নিয়োগ-বাণিজ্য করতে ওঠেপড়ে লেগেছেন। কমিটির অন্যান্য সদস্য প্রতিবাদ জানালেও তা শুনছেন না তিনি। তাঁর বক্তব্য, নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে বেতন বিলে স্বাক্ষর করবেন না তিনি। এর মানে শিক্ষক–কর্মচারীদের জিম্মি করে তিনি নিয়োগ–বাণিজ্যে সফল হতে চাইছেন।

যদিও রুহুল আমিন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোন অধিকারবলে তিনি শিক্ষক–কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রেখেছেন? এতগুলো মানুষকে আর্থিক কষ্টে ফেলার পর কী করে বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকেন তিনি।

এদিকে ভুক্তভোগীরা ও কমিটির অন্যান্য সদস্য বিষয়টির সমাধানের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্য, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন।

তিনি বিদ্যালয়ে যাবেন এবং বেতন দেওয়ার ব্যাপারে সভাপতির সঙ্গে কথা বলবেন। ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনারেরও (ভূমি) বক্তব্য, তিনি একটি আবেদন পেয়েছেন। বিষয়টি খোঁজখবর নেবেন।

আমরা আশা করছি, অবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান করবেন তাঁরা। এ ছাড়া বিদ্যালয়টির সব ধরনের শূন্য পদ দ্রুত পূরণ করা হোক। বিদ্যালয়টির ভবন পুরোনো হয়ে গেছে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকেও আন্তরিক নজর দেবে।