সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কেমন স্বেচ্ছাচারিতা

সাম্প্রতিক সময়ে নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বেপরোয়া আচরণ, হলে দখলবাজি, সংঘর্ষ, যৌন নিপীড়ন—এমন সব ঘটনায় উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটিতে আমরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখি।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কোনো প্রচেষ্টাই দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত। অভিযোগ আছে, তাঁর ইচ্ছাতেই বারবার শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের ঘটনা ঘটছে সেখানে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কোনো নির্দেশনাই মানা হচ্ছে না।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেটি দেখা যায়, বিজ্ঞাপনে যে সংখ্যক চাহিদা উল্লেখ করা হয়, তার চেয়ে অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। বিষয়টি এমন নয় যে কারও অজানা বা গোপনে সেটি ঘটছে। সিন্ডিকেট সভা ডেকে সেখানে অনুমোদনের মাধ্যমে এই অনিয়মকে ন্যায্যতা দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বছরের এপ্রিলে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে দুটি প্রভাষক পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ দেওয়া হয় চারজনকে।

নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা হলেন সাবরিনা জামান, নাসরিন আকতার, মুমতাহিনা জুঁই ও নিপা দাশ। তাঁদের মধ্যে কে বিজ্ঞাপিত পদের ভেতরে আর কে বাইরে, তা জানায়নি কর্তৃপক্ষ। বিভাগও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। এরই মধ্যে শিক্ষকেরা বিভাগে যোগ দিয়েছেন, ক্লাসও নেওয়া শুরু করেছেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সভাপতি শিরীণ আখতারের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তিনি প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করতেও রাজি হননি। অন্যদিকে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সাবরিনা শারমীনের বক্তব্য, তিনি একা সিদ্ধান্ত নেননি। উপাচার্যসহ বোর্ডের সবাই মিলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

কী স্বার্থে এভাবে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলো? গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেনের বিষয় ফাঁস হয়ে পড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। এই নিয়োগের ক্ষেত্রেও যে আর্থিক কেলেঙ্কারি নেই, তা কি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব? এভাবে শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরা।

কারণ, কম যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রার্থীরা শিক্ষক হয়ে পড়েন। নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বেআইনিভাবে শিক্ষক হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবেন বা কতটা লাভবান হবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

আমরা এমন প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের বাতিল চাই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।