গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প হচ্ছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা)। সেই প্রকল্পের অধীন মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় একটি সড়ক করা হচ্ছে। যে সড়ক হওয়ার কথা জনস্বার্থে, তা না হয়ে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার সুবিধাই সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে।
সেটি করতে গিয়ে ভয়াবহ যে কাজটি হচ্ছে, একটি খালই ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। এভাবে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে একটি খালকে অস্তিত্বহীনতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
লৌহজং উপজেলার অনেক খাল হারিয়ে গেলেও এখনো কোনোমতে টিকে আছে কলমা খাল। সেটিই এখন সড়ক নির্মাণের নামে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। খালটি পদ্মা নদী থেকে উপজেলার ভড়াকর এলাকা হয়ে কলমা বাজার দিয়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ফজুশা এলাকায় গিয়ে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় কিলোমিটার। খালটি এখনো প্রবহমান।
তবে আগের সেই জৌলুশ নেই। কয়েক বছর আগে কলমা খাল দিয়ে নৌকা ও মালবাহী ট্রলার চলত। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ গোসল করতেন সেটিতে, তবে এখনো পানির ভালো প্রবাহ থাকায় বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন নানা কাজে খালের পানি ব্যবহার করেন। খালটি ভরাট করা হলে উপজেলার অন্য খালের মতো কলমা খালটিও অস্তিত্ব হারাতে পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের যোগসাজশে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সদস্যকে সুবিধা দিতে রাস্তা নির্মাণের নামে খাল ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খালটির পাশেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইদ্রিস শেখের একটি জায়গা রয়েছে। সেখানে যাতায়াতের উদ্দেশ্যে খাল ভরাট করে রাস্তা করা হচ্ছে। আর সেই কাজ করা হচ্ছে কাবিখার টাকায়। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদও করছেন না। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না স্থানীয় ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজন।
রাস্তাটি করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাঁর প্রাপ্ত কাবিখা প্রকল্প থেকে সাত লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সে টাকায় ভরাট কাজ হচ্ছে। সংসদ সদস্য কি জানেন, তাঁর বরাদ্দ করা টাকায় একটি পরিবেশবিধ্বংসী কাজ হচ্ছে? লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেনের বক্তব্য,‘কোনো অবস্থায় খাল ভরাট, খালের প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না।
খাল ভরাট করে রাস্তাও করা যাবে না। খালের জায়গায় খাল থাকবে, রাস্তা করতে হলে খাল বাদ দিয়ে করতে হবে।’ খালের ওপর দোকানপাট করে খালটি আগেই সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। এখন খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরি হচ্ছে। খালটি রক্ষার বিষয়ে তিনি কি কোনো ব্যবস্থা নেবেন, নাকি সেটি অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়াই আমাদের দেখতে হবে?