শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যত্নবান হোন

গত জুলাই–আগস্টে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণ–অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল এ
অভ্যুত্থানে। স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেয়। বিপুল রক্তপাতের এ গণ–আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এ ছাড়া আন্দোলনে অংশ না নিয়েও মানসিকভাবে অনেক শিশুর মধ্যে নানাভাবে প্রভাব ফেলেছে এ আন্দোলন। অনেকের মধ্যে একধরনের ট্রমা দেখা দিয়েছে। ফলে তাদের এখন মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন ও চিকিৎসার বিষয়টিকে শারীরিক চিকিৎসার মতো গুরুত্বসহকারে দেখা হয় না। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে মানুষের, বিশেষ করে শিশুদের যে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়েছে, তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে।

গত রোববার বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান ও ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আলোচনায় উঠে আসে—ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হামলা, নির্যাতন ও মামলা শিক্ষার্থীদের মনের ওপর চাপ তৈরি করেছে। আন্দোলনে জড়িত না হয়েও বিপুলসংখ্যক হতাহতের ঘটনা সম্পর্কে জেনে অনেক শিশুশিক্ষার্থীও মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছে। শিশুরা সরাসরি ঘটনাস্থলে থেকে সহিংসতা দেখেছে, কারও কাছ থেকে ভীতিকর অভিজ্ঞতা জেনেছে, গণমাধ্যম থেকে খবর জেনে সেসব চিত্র কল্পনা করেছে, গুরুতর আঘাত ও মৃত্যুর কথা জেনেছে, বন্যায় ঘরবাড়ি, সম্পদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেছে। ফলে তাদের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক, দুঃখবোধ, অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা, চমকে ওঠা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, অসহায়ত্ব বোধ করার মতো আচরণিক প্রকাশ দেখা গেছে। 

আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা শিশুদের এই ট্রমা কাটাতে পরিবার ও স্কুলে তাদের প্রতি যত্ন বাড়ানো দরকার বলে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ শিশুর জন্য বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সব পর্যায় থেকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। ট্রমা কাটাতে শিশুদের কায়িক পরিশ্রমের খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ। বাসায় খেলাধুলার পাশাপাশি কিংবা বাসার আশপাশে মাঠে–পার্কে শিশুদের নিয়ে যাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে স্কুলের মাঠ বড় সহায়ক হতে পারত; কিন্তু অনেক স্কুলে খেলার মাঠ নেই। এ প্রসঙ্গে উঠে আসে ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নয়টি খেলার মাঠ দখল করে পানির ট্যাংক স্থাপনের প্রকল্পের কথাও। সেসব মাঠ উদ্ধারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান করা হয়। 

তবে পরিবারে শিশুর যত্ন নেওয়া, শিশুকে বেশি বেশি সময় দেওয়া, শিশুকে সাংস্কৃতিক বা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা, স্কুলগুলোকে বিনোদনমূলক পরিবেশ তৈরি করা শিশুদের ট্রমা কাটানোর কার্যকর উপায়। প্রয়োজনে নিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শও।