সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

একলাশপুরের আশ্রয়কেন্দ্র

বন্যাদুর্গতদের সেবায় অনুসরণীয় উদ্যোগ

বন্যার মতো দুর্যোগে প্রাণ রক্ষায় বড় অবলম্বন হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো বানানোও হয় আশ্রয়কেন্দ্রের উপযোগী করে; কিন্তু সেগুলো কতটা প্রকৃত আশ্রয়কেন্দ্র, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। সেসব আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শৌচাগার–সুবিধা, ব্যবহারযোগ্য পানির সহজলভ্যতাসহ নানা সুযোগ–সুবিধার অভাব থাকাটাই যেন স্বাভাবিক। তবে এবারের বন্যায় ব্যতিক্রম একটি আশ্রয়কেন্দ্র দেখা গেল নোয়াখালীতে, যেটি প্রকৃত অর্থেই দুর্গত মানুষদের সহায় হয়ে উঠেছে।

দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি থাকলেও সেভাবে এখানে আধুনিক ও টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। দুর্যোগ আঘাত হানার মুহূর্তেই যত তোড়জোড় দেখা যায়। তার আগে–পরের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও সংস্কারের কাজ আমাদের কাছে বরাবরই গুরুত্বহীন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট বরাদ্দ আমরা দেখতে পাই, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণেও অনেক টাকা খরচ হয়; কিন্তু গোটা বিষয়টি জনবান্ধব হয়ে উঠতে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনবান্ধব হিসেবে আমরা সামনে রাখতে পারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রটিকে।

কেন্দ্রটিতে আশ্রয় নেওয়া বন্যাদুর্গত মানুষের যাতায়াত কিংবা প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা–নেওয়ার সুবিধার্থে রাখা হয়েছে বড় একটি নৌকা। দিন–রাত এতে অবস্থান করেন কয়েকজন কিশোর ও তরুণ স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা দুর্গত মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। দুই বেলা খাবার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায়, নিয়মিত চিকিৎসাসেবা এমনকি নারীদের মাসিককালীন স্যানিটারি ন্যাপকিনও সরবরাহ করা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রটিতে।

উল্লিখিত আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ছয়টি কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন ৩০টি পরিবারের অন্তত ১৫০ সদস্য। সব কটি কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কক্ষগুলোতে ‌প্রতিটি পরিবারকে বেঞ্চ দিয়ে আলাদা আলাদা জায়গা (নির্দিষ্ট সীমানা) করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিজেদের মতো থাকছেন আপন বাড়িঘরের মতোই। সেখানে নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ যেমন আছেন, তেমনি আছেন গর্ভবতী নারীরাও। সেখানে নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা।

বন্যাদুর্গত মানুষের কষ্ট দেখে ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট মো. মোজাম্মেল হক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দরজা খুলে দেন। তিনি পরিবার ও শিক্ষার্থীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রের পরিবেশ তৈরি করেন। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক নাহিদ হাসানও। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আসছেন খাদ্য ও ওষুধের সহায়তা নিয়ে। সেখানেই সবার জন্য রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর কার্যালয়ে বসে সবকিছু তদারক করেন মোজাম্মেল হক।

আমরা এ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাই। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এসব উদ্যোগই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। একটি আশ্রয়কেন্দ্রকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলার যে উদাহরণ তাঁরা তৈরি করলেন, সত্যি তা প্রশংসনীয় ও অনুসরণীয়।