সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নিতাইগঞ্জের পুরোনো ভবন

ধসে পড়ার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ নিন

ঢাকার শহর হয়ে ওঠার পেছনে নদীকেন্দ্রিক বাণিজ্যের বড় একটি ভূমিকা ছিল। অঞ্চলটির আশপাশে কয়েকটি নদীর কারণে এখানে বাণিজ্যের পসার ঘটে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জেও তেমনটি দেখা যায়। সেখানে শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বড় একটি ব্যবসাকেন্দ্র।

নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকায় আর কে দাস রোড, বি দাস রোড, ওল্ড ব্যাংক রোড ও শহরের টানবাজার পর্যন্ত ব্যবসাকেন্দ্রটি বিস্তৃত। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ব্যবসাকেন্দ্রটি এখনো সচল ও ব্যস্তমুখর। তবে পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আঁকড়ে ধরে আছেন অনেক ব্যবসায়ী।

ভবনগুলোর বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে উদাসীন। ফলে যেকোনো সময় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসে বড় ধরনের হতাহতের ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নিতাইগঞ্জের শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে নিত্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসা। চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে নির্মিত অনেক ভবনের বয়স শত বছরের বেশি। ভবনমালিকেরা কেউ কেউ পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন করতে চাইলে রাজউকের অনুমতি পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে রাজউকের আপত্তি কিসের, সেটি আমাদের বুঝে আসে না? বড় কোনো ঘটনা ঘটে গেলে কি তাদের হুঁশ হবে?

নিতাইগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে ২০১৬ সালে একটি তালিকা প্রকাশ করে সেগুলো ভেঙে ফেলার জন্য জরুরি আহ্বান জানায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। তবে অধিকাংশ ভবনমালিক এ তালিকা নিয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। কোনো ব্যবস্থাও নেননি।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভবনগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চিঠি দেওয়া হলেও সরকারি সংস্থাগুলো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে গত শনিবার পুরোনো একটি দোতলা ভবনে গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার আগেও এ ভবনে গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করে দিলে এ বিস্ফোরণের ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত এবং প্রাণহানিও হতো না। এখন এসব মৃত্যুর জন্য কি সরকারি সংস্থাগুলো দায়ী নয়?

ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাকেন্দ্রের নিদর্শন হিসেবে সেখানকার কিছু ভবন হয়তো সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু সেখানে ব্যবসা কার্যক্রম চালানোর কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। দ্রুত পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলতে রাজউককে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। আমরা নিতাইগঞ্জে আর কোনো দুর্ঘটনা দেখতে চাই না।