সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সর্বোচ্চ সহায়তা নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম জেলার কিছু এলাকা, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার অতিবৃষ্টিজনিত দুর্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার বন্যা। সব মিলিয়ে দেশের বড় একটি এলাকা এখন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ভুগছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সহায়তা নিয়ে বন্যা মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি গতকাল চরম আকার ধারণ করেছে। ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন বলছেন। এসব উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গ্রামীণ সড়ক, ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। দুর্গত এলাকায় গতকাল পর্যন্ত বেশির ভাগ মানুষ পানিবন্দী ছিল বলে জানা গেছে। সবাইকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয়নি। দুর্গতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা দুর্গত মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছেন। শিক্ষার্থী, স্থানীয় মানুষ ও নানা সংগঠন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

গত মাসের শুরুতে ফেনীর কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। তবে এবার স্মরণকালের রেকর্ড বন্যা দেখল জেলাটির মানুষ। ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবীও কাজ করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় সেটা খুব সামান্য।

নোয়াখালীতে পানিনিষ্কাশনের বেহাল পরিস্থিতির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। গতকাল পানির ঢলের কারণে সেটি বন্যায় রূপ নেয়। টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গোমতী–পারের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তাঁরা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার বিশাল এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। সেখানে অনেক মানুষ আটকা পড়েছে। একইভাবে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের অনেক এলাকায়ও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বন্যার কারণে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্নতা উদ্ধার কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ত্রাণসহায়তাও পর্যাপ্ত নয়। উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণসহায়তা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে আশা করি সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই আমরা।