সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অবৈধ সিসা কারখানা

মালিকদের কোনোভাবেই ছাড় নয়

পুরোনো ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরির ঘটনা নতুন নয়। এতে করে প্রাণ ও পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, তা–ও অজানা নয়। দেশের নানা জায়গায় এসব অবৈধ সিসা তৈরির কারখানার খবর কয় দিন পরপর পত্রিকান্তরে আমরা জানতে পারছি।

যেমনটি দেখা যাচ্ছে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের রামখা গ্রামে। সেখানে একটি কারখানায় পুরোনো ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। কিন্তু সেই কারখানা বন্ধের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কারখানাটির আশপাশে ৫০টি বাড়িঘরের অবস্থান। দিনে অ্যাসিডের গন্ধ আর রাতে ধোঁয়ায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, সিসা মানুষের শরীরে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এতে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই কারখানায় অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। দুই বছর আগেও একবার কারখানাটি প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এরপরও কারখানাটি কীভাবে পুনরায় চালু হচ্ছে?

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কারখানা বসিয়ে সিসা তৈরি বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০ অনুযায়ী আইনত নিষিদ্ধ। বছর দুয়েক আগে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি ও একটি বেসরকারি সংস্থা একটু সমীক্ষা করে। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছয় হাজার অবৈধ সিসা কারখানা আছে।

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ব্যাটারি থেকে সিসা আলাদা করতে করতে ওই সব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের হাতে ঘা হয়ে যায় বলে খবরে প্রকাশ। পিউর আর্থ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অপর এক গবেষণা বলছে, দেশের অন্তত ২৭০টি এলাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে সিসার পরিমাণ বেশি।

এত এত গবেষণা থাকা সত্ত্বেও কেন পুরোনো ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরির ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না? সখীপুরের ওই সিসা কারখানার মালিক কত বড় তালেবর যে সেখানে বারবার অভিযান চালানোর পরও তাঁর টিকি ছোঁয়া যাচ্ছে না?

স্থানীয় প্রশাসন ছাড়াও এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের করণীয় আছে। আমরা মনে করি, তাদের শক্ত অবস্থান থাকলে দেশের সিসা কারখানাগুলো এভাবে চলতে পারত না। সখীপুরেরটাসহ টাঙ্গাইলে এমন আরও সিসা কারখানা থেকে থাকলে সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হোক।

এ কথা সত্য, সিসা কারখানাগুলোয় অনেক শ্রমিক কাজ করেন। কারখানা বন্ধ হলে এই মানুষগুলো কোথায় যাবেন, সে প্রশ্ন উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা যায়।

এতে করে প্রয়োজনীয় সিসার জোগান দেওয়া যাবে, শ্রমিকদের সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে, জনজীবনও অনিরাপদ হবে না। এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছা জরুরি।