আশার কথা, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএসে হিসাব গ্রহণের হার দ্রুত বাড়ছে। মানুষকে আর টাকা লেনদেন করতে দূরবর্তী ব্যাংকে যেতে হয় না, হাতের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমেই তাঁরা সেই প্রয়োজন মেটাতে পারেন।
বাংলাদেশে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ বেশ কয়েকটি এমএসএফ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিজের মুঠোফোন ব্যবহার করে বা এজেন্ট পয়েন্ট থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করা যায়। গত এক দশকে সেবাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে রংপুরের মানুষের মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএস হিসাব বেশি—২৮ দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বরিশাল বিভাগের ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ মানুষের এমএফএস হিসাব রয়েছে। জনমিতিক জরিপ অনুযায়ী, দেশের ২০ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষের এমএফএস হিসাব আছে।
অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বরে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রথম আলোয় যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তাতে এমএফএস ব্যবহারকারীর হার সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই হিসাবেও রংপুর এগিয়ে ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যক্তিপর্যায়ে ২২ কোটি ৬০ লাখ এমএফএস হিসাব আছে। গত এপ্রিলে সব ধরনের এমএফএস হিসাবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়।
বিবিএসের প্রতিবেদনে ১০ বছর কিংবা এর বেশি বয়সের মানুষের আর্থিক হিসাবের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দেশের ৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ মানুষের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এমএফএস, বিমা, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, ডাকঘর, পুঁজিবাজার ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে আর্থিক হিসাব রয়েছে। তবে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষের কোনো ধরনের আর্থিক হিসাব নেই।
এর অর্থ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ আর্থিক হিসাবের বাইরে আছেন। যেকোনো নাগরিক চাকরি বা ব্যবসায় যেকোনো পেশায় নিয়োজিত থাকলে তাঁকে আর্থিক লেনদেন করতে হয়। বাংলাদেশে এখনো কর্মক্ষম অনেক মানুষ উপার্জনশীল কাজের বাইরে আছেন। এর মধ্যে গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিত নারীর সংখ্যাই বেশি।
স্বল্প আয়ের মানুষই সাধারণত এমএফএস ব্যবহার করেন। যেসব অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বেশি, সেসব অঞ্চলে এই সেবা নেওয়ার প্রবণতা বেশি। এসব পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি শহরে কিংবা বাড়ি থেকে দূরবর্তী কোনো এলাকায় থাকেন। ফলে তাঁকে নিয়মিত টাকা পাঠাতে হয় পরিবারের সদস্যদের কাছে এবং এমএফএসকেই তিনি সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যতই বাড়ুক না কেন, এর মাশুল কমেনি। প্রতি হাজারে ১৮-২০ টাকা মাশুল নেওয়া জুলুমই বলতে হবে। একজন মানুষ যদি ১ হাজার টাকা পাঠান, প্রাপক ২০ টাকা কম পাবেন। স্বাভাবিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠানো হলে এর চেয়ে খরচ অনেক কম। ফলে গরিব মানুষের ওপরই আর্থিক চাপটা বেশি পড়ে।
আমরা এমএফএস সেবাপ্রার্থীদের মাশুল কমানোর দাবি জানাই। এ ক্ষেত্রে সরকার স্তর ভাগ করে দিতে পারে। যাঁরা অপেক্ষাকৃত কম টাকার লেনদেন করবেন, তাঁদের কাছ থেকে কম হারে মাশুল নেওয়া হবে। টাকার অঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাশুলের হারও বাড়ানো যেতে পারে। পানি ও বিদ্যুতে মাশুলের ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। আশা করি, সরকার ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।