সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

চাকরিপ্রার্থীদের অনিশ্চয়তা দূর করুন

ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে সরকারি চাকরি হয়ে থাকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। পিএসসি থেকে বলা হয়েছিল, তারা বছরে একটি করে বিসিএস পরীক্ষা শেষ করবে। ১৯ মে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সূচনামাত্র।

এরপর লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে এবং লিখিত পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হবেন, তাঁরা মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ পাবেন। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পিএসসি সরকারের চাহিদা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে থাকে।

৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি হলেও এর আগের তিনটি বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া এখনো শেষ করতে পারেনি পিএসসি। ৪১তম বিসিএসের ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার পর ফল প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

যেখানে পিএসসি প্রতিবছর একটি করে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল, সেখানে একসঙ্গে চারটি পরীক্ষার জট কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যে চাকরিপ্রার্থী ২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন, তিনি এখনো জানেন না কবে চূড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে। চাকরিপ্রার্থীদের একটি বড় অংশের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। এই বয়সসীমা পার হলে তাঁরা আর নতুন করে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

দ্য ডেইলি স্টার–এর খবর থেকে জানা যায়, বর্তমানে পিএসসির হাতে চারটি বিসিএস যথাক্রমে ৪১তম, ৪৩তম, ৪৪তম ও ৪৫তম প্রক্রিয়াধীন। নিয়মিত পরীক্ষা না হওয়ায় বিসিএসের মাধ্যমে প্রতিবছর শূন্য পদ পূরণ করতে পারছে না পিএসসি। চারটি বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে অন্তত ১৬ হাজার পদ পূরণ করার কথা। ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নিতে দুই বছরের মতো সময় লাগিয়েছে পিএসসি।

২১ মে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছরের মার্চের শেষ দিকে ৪০তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নন-ক্যাডারের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে পিএসসি লোকবলের অভাব, একশ্রেণির পরীক্ষকের অসহযোগিতার পাশাপাশি করোনার দোহাই দিয়েছে।

অস্বীকার করা যাবে না যে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পিএসসির ওপর চাপ বেড়েছে। বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে ও সময়মতো পরিচালনার জন্য যে লোকবল নেওয়া প্রয়োজন, তারা নেবে। কিন্তু পরীক্ষার নামে লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখার কোনো যুক্তি নেই।

পিএসসি ইতিমধ্যে সদস্যসংখ্যা বাড়িয়েছে। সে ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষা নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পরীক্ষকেরা যাতে সময়মতো লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করেন, সে বিষয়েও প্রতিষ্ঠানটির তদারকি বাড়াতে হবে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বিলম্বের কারণও খুঁজে বের করতে হবে। অনেক পরীক্ষকই কম সম্মানীর জন্য খাতা দেখতে আগ্রহী নন।

পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন ২০২১ সালে দায়িত্ব নিয়ে বিসিএস পরীক্ষার জট কমাতে পথনকশা তৈরি করার কথা বলেছিলেন। বাস্তবে সেটি হয়নি। পিএসসি এ ক্ষেত্রে করোনাকে বাধা হিসেবে দেখেছে। কিন্তু করোনাই একমাত্র বাধা নয়। করোনার মধ্যেও চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা শুরু ও শেষ করেছে পিএসসি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিয়োগও পেয়েছেন।

প্রয়োজনে পিএসসির লোকবল বাড়াতে হবে। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীদের বছরের পর বছর অনিশ্চয়তায় রাখা যাবে না। বিসিএস পরীক্ষায় বিলম্ব হলে বর্তমান চাকরিপ্রার্থীরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা-ই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভবিষ্যতের চাকরিপ্রার্থীরাও। অতএব বিসিএস পরীক্ষার জট খুলতে পিএসসিকে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা এখনই।