সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নারী শ্রমিক হত্যা

কিশোরগঞ্জের দাদনচক্রকে ছাড় নয়

দেশের নারী শ্রমিকেরা বরাবরই অবহেলিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত। পয়লা মে ছাড়া নারী শ্রমিকদের নিয়ে তেমন কথাবার্তাও হয় না। ফলে একজন নারী শ্রমিককে হত্যা করা হলো, এ নিয়ে শ্রমিক সংগঠন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।

মজুরির দিক থেকে নারী এখনো বৈষম্যের শিকার। সেই মজুরি দিয়ে কোনোভাবে জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। যার কারণে তাঁদের আর্থিক টানাপোড়েনেই থাকতে হয়। এনজিও ঋণ ও দাদনচক্রের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া তাঁদের কিছুই করার থাকে না। সেটি করতে গিয়েই কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় হত্যার শিকার হলেন ওই নারী শ্রমিক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত রোববার উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের ইন্দাচুল্লি গ্রামে দাদনের টাকার জন্য ঘর থেকে ধরে এনে রাস্তার ওপর মোছা. বিলকিস নামের ওই নারী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম ও তাঁর ভাই সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে এ হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত নারীর ছেলে তঁাদের আসামি করে একটি মামলাও করেছেন। প্রধান আসামি নূরে আলম পালিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভাই সুজন মিয়াকে।

ইন্দাচুল্লি গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ইটভাটার শ্রমিক। নূরে আলম শ্রমিকদের সরদার হিসেবে বিভিন্ন ইটখোলায় শ্রমিক সরবরাহ করেন। বর্ষাকালে ইটভাটার কাজ অনেকটা বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিকের কিছু করার থাকে না।

তখন ঘরসংসার খরচ চালানোর জন্য দাদন নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাঁদের। আবার এই দাদনের ব্যবসা করেন নূরে আলম নিজেই। ঋণের টাকার জন্য অনেকেই তাঁর হাতে নির্যাতনের শিকার হন। বছরখানেক আগে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে তাঁর দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। শ্রমিকদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি অনেককে নির্যাতন করেন।

বিলকিসের ছেলের অভিযোগ, মাকে মারার সময় নূরে আলমের হাতে-পায়ে ধরেছেন, বলেছেন টাকা দিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি শোনেননি। সবাইকে পিটিয়েছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাঁদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেননি।

বোঝাই যাচ্ছে, দাদনচক্রের হাতে গ্রামটির মানুষ কতটা অসহায়। এই দাদনচক্র থেকে ইন্দাচুল্লির মানুষকে বের করে আনতে হবে এবং সে কাজটি করতে হবে প্রশাসনকেই। সরকারের নানা ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সেখানে বাড়াতে হবে। পিছিয়ে থাকা গ্রামটিতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেও কাজ করতে হবে।

আর আমরা আশা করব, পুলিশ প্রশাসন পলাতক প্রধান আসামিকে অচিরেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে। এ ব্যাপারে কোনো অবহেলা কাম্য নয়। হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।