সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নওগাঁয় প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে

মানুষের সঞ্চয় করার প্রবণতা সহজাত। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এটি মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে মিশে আছে। মানুষের এই অপরিহার্য প্রবণতাকে লক্ষ্যবস্তু বানায় একশ্রেণির অসাধু মানুষ। সঞ্চয় ও সমবায় সমিতির নামে সংগঠন গড়ে তুলে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয় এই অসাধু চক্র। নওগাঁয় এমন কিছু সংগঠনের খপ্পরে পড়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছেন। স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে তৎপর থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

সমবায় অধিদপ্তরের জেলা সমবায় অফিসে নিবন্ধন ছাড়া কোনো সমবায় সমিতি পরিচালনা করার সুযোগ নেই। নিবন্ধন পাওয়ার পর সমিতিকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। নওগাঁর ১১টি উপজেলায় নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা ১ হাজার ৬২০। এগুলোর মাধ্যমে ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৪৫০টি সমিতি। এর মধ্যে চলতি বছর আটটি সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।

কয়েক শ সমিতির মধ্যে এক বছরে মাত্র আটটি সমিতির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটলেও এ কয়টি সমিতির সদস্য ছিলেন অন্তত ৫ হাজার গ্রাহক এবং তাঁদের আমানতের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে এভাবে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই গুরুত্বহীন মনে করার সুযোগ নেই। কেউ পুকুরের মাছ, কেউ খেতের ফসল বিক্রি করে দিনের পর দিন অল্প অল্প টাকা করে একেকজন গ্রাহকের ৫–১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা ছিল এসব সমিতিতে। দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল এই সঞ্চয় হারিয়ে বিপুলসংখ্যক গ্রাহক এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সরকারি কার্যালয়ে চাকরি করা অনেক নিম্নপদস্থ কর্মচারীও হারিয়েছেন পেনশনের টাকা।

জেলা সমবায় কর্মকর্তার বক্তব্য, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত সমিতিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ও থানায় একাধিক মামলা চলমান। গ্রাহকদের থেকে টাকা নিয়ে তা উৎপাদনশীল খাতে না খাটিয়ে সমিতির কর্মকর্তারা জমিজমা কিংবা বাড়ি-গাড়ি কিনে থাকেন, এসব করতে গিয়ে সমিতিগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। ভবিষ্যতে যেকোনো সমিতির ওপর তাঁদের মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হবে।

স্থানীয় নাগরিক সমাজের বক্তব্য, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সমবায় কার্যালয়ের অসতর্কতার কারণে এসব হচ্ছে। সমিতিগুলোতে নিবন্ধনের আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। নিবন্ধন দেওয়ার পর সমবায় সমিতিগুলোকে মনিটর করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও তদারকি বাড়াতে হবে।

আমরা আশা করব, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, মানুষের আমানত ফেরত পাওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করা হবে।