ভারী বৃষ্টি হলেই সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণহানিও হয়। প্রতি বর্ষায় আমরা এমন ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি। প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিলেও কোনোভাবেই পাহাড়ধসের ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না। এর মধ্যে আবহাওয়ার সংবাদ হচ্ছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রামে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। একই কারণে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তাও জারি করা হয়েছে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে প্রস্তুতি নিতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানা যাচ্ছে, গত মঙ্গলবার বেলা তিনটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে সোমবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকা উত্তাল রয়েছে এখন। এ কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থায়ী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
হালকা থেকে মাঝারি, আবার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই কারণে পাহাড়ধস হওয়ার সতর্কতাও দেওয়া হয়েছে। লঘুচাপের কারণে জোয়ারের উচ্চতাও ১ ফুট বেড়েছে। জোয়ারের পানিতে মঙ্গলবার দুপুরে নগরের আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিকসহ কয়েকটি এলাকা তলিয়ে গেছে।
২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি আরও কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে করা হয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। ওই কমিটির প্রায় প্রতিটি সভায় বিভিন্ন পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের উচ্ছেদ ও সেবা অর্থাৎ বিদ্যুৎ–গ্যাস–পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে। তবে এটি বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি সেভাবে। গত জুন মাসেও কমিটির ২৮তম সভায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন করতে হচ্ছে, পাহাড় কেটে গড়ে তোলা অবৈধ বসতিগুলোতে কীভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির সংযোগ দেওয়া হয়?
প্রশাসনের বক্তব্য হচ্ছে, পাহাড় থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ এবং তাদের পুনর্বাসন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিকে পুনর্বাসন করা হলেও ঝুঁকিতে থাকা অধিকাংশ মানুষই পাহাড় ছেড়ে যেতে চান না।
নদীভাঙন ও কর্মসংস্থানের অভাবে ভুক্তভোগী মানুষেরা বাধ্য হয়ে বড় শহরগুলোতে থিতু হচ্ছেন, এই বাস্তবতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ঢাকা শহরে বস্তিতে তাঁদের ঠাঁই হলেও সিলেট ও চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে তাঁদের আশ্রয় হচ্ছে পাহাড়। পাহাড় কেটে সেখানে অবৈধ বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। অবাধে পাহাড় কাটা কোনোভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। পাহাড়খেকোদের নাম পত্রপত্রিকায় এলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না কেন, সেটিই আমাদের প্রশ্ন।
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের দিকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি বন্ধ করা ছাড়া পাহাড়ধস ও এতে প্রাণহানি রোখা সম্ভব নয়।