সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যখন গ্রামে শহরের সুবিধা দেওয়ার ফলাও প্রচার চালাচ্ছেন, তখন গ্রামের রাস্তাঘাটগুলোর শোচনীয় চিত্র বলে দেয়, তাঁদের কথা ও কাজের মধ্যে কতটা ফারাক।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পরপর দুটি বৈঠকে সরকারি ও বিরোধী দলের অন্তত চারজন সংসদ সদস্য গ্রামীণ সড়কের দুর্দশায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, বেহাল রাস্তার কারণে সংসদ সদস্যদের কটূক্তি শুনতে হচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমের আগেই রাস্তাঘাট সংস্কার করার জন্য সংসদ সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের এ বিলম্বিত উদ্বেগ, ক্ষোভ ও আহ্বান গ্রামীণ সড়কের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ওই কমিটিতে মোট সদস্য আছেন ১০ জন। যে সংসদ সদস্যরা গ্রামীণ রাস্তার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের দুজনের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে কিছু রাস্তার খারাপ অবস্থা দেখা গেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি ও ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এলজিইডির সড়ক নিয়ে আলোচনা হয়। ৩ মে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ৩০ মার্চের বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়।
দেশের সব উপজেলা সড়ক ও ইউনিয়ন সড়কের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির)। তারা সংসদীয় কমিটিকে জানায়, গ্রামীণ রাস্তা মেরামতের যে চাহিদা, তাতে ৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। পাওয়া গেছে ৪ হাজার কোটি টাকার মতো। ফলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে উপজেলা সড়ক এবং পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামতের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এসব কাজের ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়নের পর নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে কাজের গতি মন্থর হয়েছে।
এলজিইডির সড়কগুলো তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয় যথাক্রমে ভালো, মোটামুটি ও নাজুক। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এলজিইডি অনেক সময় অপেক্ষাকৃত ভালো সড়ক সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকে। অথচ নাজুক সড়কগুলো বরাদ্দ পায় না। আবার অনেক সড়ক যেনতেনভাবে মেরামত করা হয়, যা কিছুদিনের মধ্যে আগের অবস্থায় চলে আসে।
বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য আগের বৈঠকে দেওয়া তাঁর বক্তব্যের কার্যবিবরণী অস্বীকার করেছেন। সংসদ সদস্যদের অন্তত সত্য বলার সাহস থাকা উচিত, তা না হলে তাঁরা নির্বাহী বিভাগকে জবাবদিহির আওতায় আনবেন কীভাবে? গ্রামীণ সড়ক বেহাল থাকলে কোনো কোনো সংসদ সদস্য বিব্রতবোধ করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা যে সব সময়ই বিব্রতকর অবস্থায় থাকেন, তার জবাব কী।
যেখানে ৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন, সেখানে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলে বেশির ভাগ সড়ক যে মেরামতের বাইরে থাকবে, সেটি বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না। সমস্যা হলো আমাদের জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগই এলাকায় থাকেন না। জনপ্রতিনিধিরা যদি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতেন, তাহলে গ্রামীণ সড়ক কিংবা অন্য কোনো সমস্যা অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন।
বর্ষা মৌসুমের আগে সড়কগুলো সংস্কার না হলে জনগণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় খাতের বরাদ্দ কমিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হোক। মেয়াদের প্রায় শেষে এসে সংসদ সদস্যরা গ্রামীণ সড়ক নিয়ে আহাজারি না করে আগে থেকে সোচ্চার হলে এলাকার মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করতেন।