জুলাই মাসে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় সরকার যখন লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়, কষ্ট হলেও জনগণ মেনে নিয়েছিল। কোথায়, কখন কী পরিমাণ লোডশেডিং করা হবে, তার সূচিও ঠিক করে দেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কথা ছিল ঢাকায় দিনে এক ঘণ্টা এবং ঢাকার বাইরে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হবে। কিন্তু বাস্তবে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেক বেশি; যা কেবল মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই ব্যাহত করছে না, অর্থনীতিকেও মারাত্মক চাপে ফেলেছে।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এলাকাভেদে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। শিল্পনগরী গাজীপুরে সোমবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩৫৩ মেগাওয়াট। পাওয়া গেছে ২৪৪ মেগাওয়াট। ঘোষিত সূচিতে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং থাকার কথা থাকলেও কয়েকটি এলাকার গ্রাহকেরা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবঞ্চিত ছিল। সময়সূচি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে ঢাকাসহ দেশের আরও অনেক স্থান থেকে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। গত রোববার ডেসকো এলাকায় ঘাটতি ছিল ৪০০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে ডিপিডিসি এলাকায় লোডশেডিং ছিল ৩৬০ মেগাওয়াট। ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এলাকার বাসিন্দাদের আরও বেশি সময় ধরে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। আর ওই দিন আরইবি এলাকাতেই ২ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়েছে। এর আগে সরকার শিল্পাঞ্চলে সাপ্তাহিক ছুটি অদলবদল করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা-ও কার্যকর হয়নি।
যখন লোডশেডিং দেওয়া হয়, তখন ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে কিছুদিন দেশবাসী কৃচ্ছ্রসাধন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এরপরই সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিল। এতে সব শ্রেণির মানুষই, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক মানুষের কষ্ট বেড়েছে। বড় শহরগুলোতে অ্যাপার্টমেন্ট, শপিং মল ও মার্কেটে লোডশেডিং হলে সেখানকার লোকজন জেনারেটর দিয়ে ডিজেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকেন। গ্রামাঞ্চলে সেই বিকল্প ব্যবস্থা নেই।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লোডশেডিং প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং দেওয়া হবে, তার একটি রুটিন তৈরি করুন। কারণ, জনগণ যেন সে জন্য প্রস্তুত হতে পারে এবং তাদের দুর্ভোগ কমানো যায়।’ কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাঁর সেই নির্দেশনা না মেনে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো লোডশেডিং দিয়ে যাচ্ছেন।
জ্বালানিবিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে যে ভয়ংকর দুর্নীতি ও অপচয় হচ্ছে, তা কমিয়ে আনতে পারলে দেশবাসীকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না। বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের নামে শত শত কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। এর জন্য যঁারা দায়ী, তঁাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমাদের জানা নেই।
সরকার চিন্তাভাবনা করেই লোডশেডিংয়ের সূচি ঠিক করেছে। কেন সেই সূচির ব্যত্যয় ঘটল এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে, সেটি খতিয়ে দেখা হোক। দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে বলব, অলীক আশ্বাস না দিয়ে জনগণের দুর্ভোগ ও অর্থনীতির ক্ষতি কমিয়ে আনতে কার্যকর কিছু করুন। সূচির বাইরে লোডশেডিং দেওয়া বন্ধ হোক।