সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বিশেষ অভিযান

ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা কোথায়

সরকার অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালায় ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পুলিশ সদর দপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই সপ্তাহব্যাপী এ অভিযানে ২৩ হাজার ৯৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে তালিকাভুক্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ৭২ জন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, এর বাইরে কারা গ্রেপ্তার হয়েছেন? জঙ্গি, সন্ত্রাসী পাকড়াও করাই যখন বিশেষ অভিযানের উদ্দেশ্য, তখন বিরোধী দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী কেন গ্রেপ্তার হলেন?

পুলিশ সদর দপ্তরের দাবি, বিজয় দিবস, বড়দিন, খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ উদ্‌যাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এবং ২০ নভেম্বর ঢাকায় আদালত ফটক থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। আমরা আশা করেছিলাম, এ অভিযানে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা ধরা পড়বেন। কিন্তু ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি কিংবা যেসব জঙ্গি তাঁদের ছিনতাই করে নিয়ে গেছেন, কারও হদিস করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সফল সরকারের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যায় না।

 পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত ১৫ হাজার ৯৬৮ জন আসামি। আর অভিযান চলাকালে
৫ হাজার ১৩২টি মামলা হয়েছে। অভিযানকালে ২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২ লাখ ইয়াবা, ৮ কেজি ৬ গ্রাম হেরোইন ও ৫ হাজার ৪১৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেছে পুলিশ। এসব পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ। এ জন্য বিশেষ অভিযানের প্রয়োজন হয় না। বিএনপির অভিযোগ, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় তাদের যে সমাবেশ ছিল, তা বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ এ অভিযান চালিয়েছে এবং দলের বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

ঢাকার আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে উদ্ধার করা এ অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলেও সেটি সফল হয়নি। জঙ্গি দমনে পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানানো হয়েছে, কিন্তু সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের আশঙ্কা, জঙ্গিরা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন। এমন কিছু ঘটে থাকলে কোনো অভিযানই কাজে আসবে না। 

তাহলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতেই এ অভিযান কি না, সেই প্রশ্নই সামনে এসেছে। বিশেষ করে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে যেখানে রাজধানীতে একধরনের অস্থিরতা ছিল। বিজয় দিবস, বড়দিন, খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ উদ্‌যাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্নভাবে উদ্‌যাপিত হোক, সেটা সবারই কাম্য। এ জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু অপরাধী ধরার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হলে অভিযান পথ হারাতে বাধ্য। পূর্বাপর সরকারের আমলে আমরা সেই একই ধারা দেখে এসেছি, যা আইনের শাসন কিংবা অপরাধ দমনের সহায়ক নয়।

অপরাধের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযান চালাতে হবে পেশাদারি মনোভাব নিয়ে। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। বিশেষ অভিযানে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই অভিযান অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কী ভূমিকা রাখতে পেরেছে?