সড়ক, ট্রেন, লঞ্চ—কোথাও যাত্রীরা নিরাপদ নন। কখনো তাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হন, কখনো যাত্রীবেশে ডাকাতেরা এসে তাঁদের সবকিছু লুট করে নেয়। এসব কিসের আলামত? যাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়?
প্রথম আলোর খবর ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে ঈগল পরিবহনের একটি বাস গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি সিরাজগঞ্জের দিবারাত্রি হোটেলে খাবারের বিরতি শেষে রওনা হতেই পথে ১০ থেকে ১২ জন তরুণ বাসে উঠে পড়েন। এরপর বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতেই তাঁরা ধারালো অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন এবং টাকাপয়সা, মুঠোফোন ও অলংকার লুট করে নেন।
এ সময় একজন নারী যাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ডাকাত দলের একজন বাসের চালককে মারধর করে সরিয়ে দিয়ে নিজেই চালকের আসনে বসে পড়েন এবং অন্যরা যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করতে থাকেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় বাসটি রাস্তার পাশের বালুর ঢিবিতে পড়লে ডাকাতেরা পালিয়ে যান। একজন বাসযাত্রী বলেছেন, ‘আমরা অসহায় ছিলাম। হাত, মুখ, চোখ বাঁধা ছিল। কিছুই করতে পারিনি। টানা তিন ঘণ্টা আমরা ওই বাসে জিম্মি ছিলাম। বাসটি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আমরা কিছুই জানি না।’
গণপরিবহনের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। হাইওয়ে পুলিশকে অনেক সময় বাসে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। ঈগল পরিবহনের বাসে যে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তিনি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসছিলেন তৈরি পোশাক কারখানায় কাজের সন্ধানে। কিন্তু আমাদের সড়ক পরিবহনব্যবস্থা কিংবা সড়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশও তাঁকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে মধুপুরে চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে পঁচিশমাইল এলাকার রাস্তায় ফেলে দেন আসামিরা। এ ঘটনায় করা মামলায় ছোঁয়া পরিবহনের চার শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন টাঙ্গাইল জেলা আদালত। কিন্তু অনেক ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনার বিচারই হয়নি। এ বিচারহীনতা সড়কে অপরাধ বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার পুলিশ কমিশনার জানিয়েছিলেন, বাসে ডাকাতি রোধে নতুন প্রযুক্তি আনা হচ্ছে, যাতে বাটনে চাপ দিলেই সহায়তা চেয়ে বার্তা যাবে স্থানীয় পুলিশ সুপার, বাসের মালিক ও জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এর কাছে। কিন্তু গত ছয় মাসেও সেই প্রযুক্তি ব্যবহারে কোনো অগ্রগতি নেই। দূরপাল্লার বাসে হামেশাই ডাকাতি হয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ও পরিবহনকর্মীদের মধ্যে যোগসাজশ থাকে। এ ক্ষেত্রেও সে রকম কিছু ঘটেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা দরকার।
ঈগল পরিবহনের মালিক জানিয়েছেন, দিবাগত রাত ৩টা ৯ মিনিটে তিনি মুঠোফোনে ডাকাতের কবলে বাস পড়ার কথা জানতে পারেন। কিন্তু জানার পর তিনি কী করেছেন? তিনি কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছেন? জানিয়ে না থাকলেও অঘটনের দায় তাঁকেও নিতে হবে।
মহাসড়কে এভাবে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা চলতে দেওয়া যায় না। এসব অপরাধের ঘটনায় যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতা আনতে হবে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহনের চালক ও কর্মীদের ভূমিকাও তদন্ত করে দেখা দরকার। ডাকাতি ও ধর্ষণের শিকার যাত্রীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।