উন্নয়ন মানে সামনের দিকে পা বাড়ানো। এক শব্দে বলা যায়—অগ্রগতি। তবে সেটি তখনই জুতসই হয়, যখন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে উন্নয়ন হয়। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখছি কী?
উন্নয়নের বিপুল আয়োজনের প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন অনেক স্থাপত্য নিদর্শন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি আঘাত এসে পড়ছে সেগুলোর ওপর; যেমনটা আমরা দেখতে পেলাম সিলেটের গোলাপগঞ্জে। সেখানে সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে মোগল আমলের একটি পুল।
এ নিয়ে গত মঙ্গলবার স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সমালোচনা দেখা যায়। এরপরও সেদিন রাত পর্যন্ত পুলটি ভাঙার কাজ চলে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ এলাকা অভিমুখী একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। এ সময় বাউশা এলাকার দেওরভাগা খালে একটি সেতুও নির্মাণ করা হয়।
২০ ফুট দীর্ঘ ও ১৬ ফুট প্রস্থের সেতুটি ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিত। এখন একই জায়গায় আরেকটি সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে পুলটি। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর সেতুর সংযোগ সড়কটিও প্রশস্ত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসানের বক্তব্য শুনে আমরা অবাক হই। তাঁর দাবি, এটি প্রাচীন কোনো ইমারত নয়, তাই দেখারও কিছু নেই। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি অক্ষত রেখেই সেটির পাশেই বা খালের অন্য অংশে নতুন সেতু নির্মাণ করা যেত বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রেও উপজেলা প্রকৌশলীর বক্তব্য, ‘সেতুর অবস্থান শতভাগ সোজা রাস্তায়। তাই বাঁকা করে বিকল্প সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। এমনকি সেতুর পিলারগুলো এমনভাবে আছে, যা দিয়ে সহজে বড় নৌকা চলাচল করতে পারে না।’
অথচ এলজিইডির নির্মিত অনেক সেতুর ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি, সেগুলো নিচ দিয়ে নৌকা চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। মূলত পুরোনো স্থাপত্যটি রক্ষায় তাদের সদিচ্ছার অভাব ছিল। যেনতেনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ থাকলে এমনটিই হওয়ার কথা নয় কি?
মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলটি ভাঙা স্থগিত করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত সেতুর ভেঙে ফেলা অংশ সংস্কার করে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমরা চাই, এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পুলটি সংস্কার করবে। সরকারি প্রকল্পে যেন পুরোনো স্থাপত্যের ক্ষতি না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।