বিদেশগামী যাত্রীদের মার্কিন ডলার বা সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রা লাগবেই। তাঁরা সাধারণত দুটো উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে থাকেন—বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকার অনুমোদিত মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক ডলার-সংকটের কারণে ব্যাংক-নির্ধারিত দরের চেয়ে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে।
ডলার-সংকট কাটাতে প্রয়োজনে বেশি দামে হলেও প্রবাসী আয় কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক এখন প্রবাসী আয়ে ডলার কিনছে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকায়।
যদিও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা মিলে ডলারের দাম নির্ধারণ করে।
মানি চেঞ্জারগুলো মূলত বিদেশফেরত, প্রবাসী ও পর্যটকের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছ থেকেও নগদ ডলার কিনে কয়েক টাকা বেশিতে বিক্রি করে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছিল বিদেশগামী যাত্রীদের। আবার কোনো মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ ছিল।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার কিছু মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চালানোয় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর প্রকাশ্যে ডলার বিক্রি করছে না। বিদেশগামী যাত্রীদের ঘাটে ঘাটে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। অনেকে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধরনা দিয়েও ডলার পাচ্ছেন না। ডলারের জন্য তাঁদের হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়। ভ্রমণের বিষয়টি বাদ দিলেও চিকিৎসা ও উচ্চশিক্ষা লাভেও অনেকে বিদেশে যাচ্ছেন। সরকার বিদেশগামী যাত্রীদের হয়রানি বন্ধের জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা হিতে বিপরীত হয়েছে।
মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, বেশি দামে ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামে কিছুতেই বিক্রি করা সম্ভব নয়। মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক প্রথম আলোকে বলেন, মানি চেঞ্জারের বাইরে এখন অনেকে হাতে হাতে ডলার বিক্রি শুরু করেছেন। এতে যত দিন যাচ্ছে, এ ব্যবসা ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও নীতিগতভাবে সেটি স্বীকার করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তাঁরা মনস্থির করতে পারেননি। কেউ কেউ নির্বাচনের পর ‘বদ্ধ দ্বার মুক্ত’ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা। কোনো মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান হুন্ডির ব্যবসা করলে কিংবা অন্য কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলে সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু যেভাবে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চালানো হয়েছে, তা কোনোভাবে কাম্য নয়। মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা বন্ধ করলে বিদেশগামী যাত্রীরা আরও বেশি বিপদে পড়বেন।
প্রণোদনার পরও যেখানে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করতে পারছে না, সেখানে মানি চেঞ্জারগুলো চালু রাখতেই হবে। একই সঙ্গে বিদেশযাত্রীদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। এতে নগদ ডলারের চাহিদাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে।