দেশের বনাঞ্চলগুলো একে একে বিনষ্ট হচ্ছে। হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য। হারিয়ে যাচ্ছে পাখির নিবাসগুলোও। অনেক দেশি পাখি বিলুপ্তপ্রায়। এর মধ্যে যে পাখির সমারোহ আমরা সারা বছর ধরে দেখি, তার বড় একটা অংশ পরিযায়ী পাখি। শীতের মৌসুমের আগে থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ দেশে আসে এসব পাখি। থাকে একেবারে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
অনেক পাখি মার্চ-এপ্রিল পর্যন্তও। দুঃখজনক হচ্ছে, সেসব পাখির অনেকগুলোই আর ফেরত যেতে পারে না। শিকারিদের শিকার হয়ে যায়। পাখিনিধন বন্ধে আইন থাকলেও তা তেমন একটা কার্যকর হয় না। জরিমানা বা লঘু শাস্তি দেওয়া হলেও শিকারিরা আবার পাখি শিকারে জড়িত হয়ে যান। এ কারণে আমরা দেখছি ভোলার বিভিন্ন জেলায় অজস্র পাখি শিকারের ঘটনা।
অঞ্চলটি যেন পাখি শিকারের স্বর্গ হয়ে উঠেছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও শিকারিরা এখানে চলে আসেন পাখি শিকারের জন্য। বোঝাই যাচ্ছে, পাখিনিধন বন্ধে প্রশাসন নির্বিকার।
প্রতিবছর নদ-নদীবিধৌত দ্বীপজেলা ভোলার বিভিন্ন চরে বসে পরিযায়ী পাখির মিলনমেলা। পাখিরা সেখানে চরে চরে ঘুরে বেড়ায় ও মাছ শিকার করে খায়। পাখিবিশেষজ্ঞ ও পাখিশুমারির সঙ্গে যুক্ত সংগঠকেরা বলছেন, চলতি বছর জলচর পরিযায়ী পাখিশুমারি দল ৫৪ হাজার ১৮০টি পাখি গুনেছে। যার মধ্যে সংকটাপন্ন ১৮ হাজার ৩০০টির মতো গাঙচিল ও সহস্রাধিক বিপন্ন দেশি গাঙচষা পাখি দেখেছে তারা। কিন্তু শিকারিদের চক্র এসব পাখির নিরাপদ বিচরণক্ষেত্রটি ধ্বংস করে দিচ্ছে।
পাখিশিকারিরা ফাঁদ পেতে পরিযায়ী পাখি ধরছেন এবং বিষটোপ ও বন্দুক দিয়ে হত্যা করছেন। এরপর সেসব পাখি রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। শুধু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি—এ দুই মাসে ভোলায় ২৪ হাজার পাখি হত্যা করে এসব চক্র। প্রতিবছর এক কোটি টাকার পাখি বিক্রির ব্যবসা গড়ে উঠেছে এখানে, এ কারণে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, বরিশাল—এমনকি ঢাকা থেকে পর্যন্ত পেশাদার শিকারিরা সেখানে পাখি শিকার করতে যান। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে পাখিশিকারিরাই এসব তথ্য দিয়েছেন।
তবে পাখিনিধন বন্ধে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা। যদিও স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের ভাষ্য, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বন বিভাগকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখেননি তাঁরা। এটিই যদি বাস্তবতা হয়ে থাকে, তাহলে দুঃখজনক।
আমরা মনে করি, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের আরও তৎপর হওয়া উচিত। এ কাজে স্থানীয় তরুণসমাজ, এলাকাভিত্তিক সংগঠনকে যুক্ত করা যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে সোচ্চার করে তুলতে পারে প্রশাসন। কথা হচ্ছে, এখানে সদিচ্ছাই জরুরি।